দখিনের খবর ডেস্ক ॥ দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে ১৭৫টি স্থাপনা উদ্বোধন এবং ৫০টি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্থাপনা উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে গতকাল শনিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ ও গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও ৫টি মুজিব কিল্লা উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি বলেন, দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা হতে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্ব সাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। এরই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। উপকূলীয় দুর্গত জনগণ যেমন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন তেমনি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবেন। এ ছাড়া জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাট-বাজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে। উপকূলীয় এলাকায় বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধিতাবান্ধব ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার বিপদাপন্ন মানুষ এবং প্রায় ৪৪ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের গবাদিপশুসহ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয় নিতে পারবেন। তিনি বলেন, বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বন্যাপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সাড়াদানের অংশ হিসেবে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত করা এবং দুর্যোগের পরপরই প্রাথমিক জরুরি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিতে ৬৪টি জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয় বলেও জানান এনামুর রহমান। ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাকোয়াটিক সি সার্চবোট, মেরিন রেস্কিউ বোট, মেগাফোন সাইরেনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সহজ করার জন্য আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বড় ধরনের দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধারে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দেয়া হচ্ছে, সেটি যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপান্তর হয়, তবে তা একপর্যায়ে শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরো উপকূলকে সতর্ক করা হবে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তা আগামী ২৬ মে নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকালই (গত শুক্রবার) আমরা পরিপূর্ণ সংবাদ পেয়েছি। এটা এখন লঘুচাপ অবস্থায় আছে। এটা আগামীকালের (আজ রোববার) মধ্যে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হবে, এরপর ২৩ থেকে ২৪ মের মধ্যে নিম্নচাপ হবে। নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হবে। ২৬ মে ভূমিতে আঘাত করার আশঙ্কা আছে। ভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ হবে ১২০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার। এটা বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জের কাছাকাছি আছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এর ডিরেকশন ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এটি যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে যদি সোজাসুজি আসে তবে আমাদের খুলনা বিভাগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা জানার পর আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তরেরর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। বিকেল ৪টায় (গতকাল শনিবার) আমরা প্রস্তুতি সভা ডেকেছি। বিকেলে প্রস্তুতি সভার পর আমরা মাঠ প্রশাসনে আমাদের নির্দেশনা পাঠাব। ইতোমধ্যে সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রচার কাজ শুরু হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এটি এখন পর্যন্ত লঘুচাপ হয়ে আছে, এখনই আতঙ্ক কিংবা শঙ্কার কিছু নেই। অন্যবারের মতো এটা ‘সুপার সাইক্লোন’ হয়ে আঘাত হানতে পারে। আরেকটা বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড় এগোনোর সময় প্রতি মুহূর্তে দিক পরিবর্তন করে। দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। সেজন্য আমরা আমাদের পুরো উপকূলকে সতর্ক করব, প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেব। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনো সৃষ্টিই হয়নি, তাই কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা যাবে না। আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ওয়েল প্রিপেয়ার্ড।
Leave a Reply