দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সবচেয়ে কম সময়ে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তরুণ পর্যটক সুমন পাল। তার এই ভ্রমণে সঙ্গী ছিলো একটি প্রাইভেটকার। চার চাকার এ বাহনে সুমন যাত্রা শুরু করেন রাজধানী ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে। আবার ৮ দিনের মাথায় তার যাত্রা শেষ হয় এই জিরো পয়েন্টে এসে। এর আগে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে এমন রেকর্ড করেছিলেন সাইদি হোসাইন নামে এক তরুণ। তিনি ২০১৬ সালে ১৩ দিনে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে ছিলেন। এবার তার দখলে সেই রেকর্ডটি আর থাকলো না। সাইদির চেয়ে ৫ দিন কম সময় নিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন সুমন। চার চাকার বাহনে ভ্রমণের বিষয়ে সুমন পাল বলেন, ২০১৬ সালে এই রেকর্ডটির বিষয় আমার চোখে পড়ে। তখন সাইদি হোসাইন নামের একজন ১৩ দিনে পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছেন। আমি চিন্তা করলাম এ রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করবো। তাই ১৩ দিনের চেয়ে কম সময়ে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথমে আমার ইচ্ছে ছিলো ১০ দিনে সারাদেশ ঘুরবো। কিন্তু পথে নামার পরে আমি মাত্র ৮ দিনেই পুরো ৬৪ জেলা ঘুরেছি। তিনি আরো বলেন, এক মাস ধরে আমি এই যাত্রার পরিকল্পনা করি। আর যাত্রা সহজ করতে ৬৪ জেলার রোডম্যাপ ও ৬৪ জেলা প্রাইভেটকার দিয়ে ভ্রমণের সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। তবে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি একটি সমস্যার সম্মুখিন হই। অনেক জেলারই জিরো পয়েন্ট নেই। কিন্তু প্রথমে আমার ইচ্ছে ছিলো ৬৪ জেলার জিরো পয়েন্ট ভ্রমণের। কিন্তু অনেক জেলার জিরো পয়েন্ট পাচ্ছিলাম না। পরে আমি সিদ্ধান্ত নেই জিরো পয়েন্টা না পেলেও প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভ্রমণের। সেই অনুযায়ী আমি পরিকল্পনা সাঁজিয়ে পথে নেমে পড়ি। আমি আমার ভ্রমণের সময়ে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের ছবি তুলি। সেই ছবি আমার ‘টার্গেট ৬৪ জেলা ইন বাংলাদেশ’ নামক পেইজে পোস্ট করি। সুমনের যাত্রার হিসাবে দেখা যায়, পুরো ৬৪ জেলার ভ্রমণে তার সময় লেগেছে ৮ দিন ১১ ঘণ্টা, ২৮ মিনিট। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৮টি জেলা ভ্রমণ করেছেন তিনি। প্রতিদিন ভোর ৪টায় যাত্রা শুরু করতেন এবং কোনো একটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তার যাত্রা শেষ হতো। ঢাকার ছেলে সুমন প্রথম দিনেই ৯ টি জেলা ভ্রমণ করে বরগুনা জেলায় অবস্থান করেন। এরপরের দিনগুলোতে ধারবাহিকভাবে ভোর ৪টায় যাত্রা শুরু করে রাত ৯টার মধ্যে আরও ৮টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে নড়াইল জেলায় অবস্থান করেন। তৃতীয় দিন যাত্রা শুরু করে রাত ৮ টার মধ্যে ৯টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে রাজশাহী জেলায় অবস্থান করেন। চতুর্থদিন রাত ৮ টার মধ্যে ৯টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে কুড়িগ্রাম জেলায় শেষ করেন। পঞ্চম দিন রাত ৮টার মধ্যে আরও ৭টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থান করেন। ষষ্ঠদিন রাত ৯টার মধ্যে আরও ৭টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে সিলেট জেলায় অবস্থান করেন। সপ্তম দিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ৭টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে ফেনী জেলায় অবস্থান কের। অষ্টম দিন রাত ৯টার মধ্যে ৫টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণ শেষ করে চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থান করেন। আর যাত্রার শেষ ১১ ঘণ্টায় বাকি ৩টি জেলার প্রশাসকের কার্যালয় ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ঢাকার জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয় প্রাইভেটকারে দ্রুত সময়ে দেশের সবকটি জেলা ভ্রমণের মিশন। দেশের সব কয়টি জেলা ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বিষয়ে এ তরুণ বলেন, আমার পুরো যাত্রাটি বড় ধরনের সমস্যা ছাড়াই শেষ করতে পেরেছি। আর ছোট যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, তা এতো বড় ভ্রমণের তুলনায় সামান্য ছিল। সম্পূর্ণ যাত্রাপথে মোট চার বার আমার গাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিটি সমস্যার সমাধান আমি নিজেই করে যাত্রা চালিয়ে যাই। তিনি বলেন, কয়েকটি পুলিশের চেকপোস্টে বিরতি দিতে হয়। যা সড়ক পথে নিয়মিত হয়ে থাকে। এই সময় পুলিশ সদস্যদের আচরণ ছিল খুবই আন্তরিক। আমি প্রতিদিন গড়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েছি। প্রতি জেলায় আমি ৩০ মিনিট যাত্রা বিরতি দিতাম। এই সময়ে আমি প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছবি তুলে (পেইজে) অনলাইনে পোস্ট করতাম। এছাড়া গাড়ির তেল নেয়া, হালকা নাস্তা করতাম। আমার যাত্রার প্রথম দিনেই ২২ ঘণ্টা গাড়ি চালাই। আর এদিন আমাকে ৫টি ফেরি পার হতে হয়। পেশায় মোটরযান ব্যবসায়ী এই তরুণ বিভিন্ন সময়ে দেশের আনাচে কানাটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই অভিজ্ঞতাই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে কাজে লাগিয়েছেন। এবার স্বপ্ন দেখছেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করার। তার ইচ্ছা প্রথমে এশিয়ার দেশগুলো ঘুরে দেখা।
Leave a Reply