বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জ্যৈষ্ঠের তাপদাহে পুড়ছে কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী বরিশাল নগরীসহ পুরো জেলার বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস হানা দেওয়ার পর থেকে দিনে দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের কর্মজীবীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রকৃতির শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে বরিশালের মানুষ। গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা আগামী ৪৮ ঘন্টায় আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়ে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্য উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ছে। শনিবার বিকেল তিনটায় সর্বোচ্চ ৩৪.৮ ডিগ্রি এবং সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিলো ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিলো শতকরা ৫৯ ভাগ। শুক্রবার ছিলো সর্বোচ্চ ৩৩.৭ এবং সর্বনিন্ম ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩২.৭ এবং সর্বনিন্ম ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসুদ রানা রুবেল আরও জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সামান্য বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে বৃষ্টি হচ্ছেনা ॥ বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চলতি বছরের শুরু থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরে বৃষ্টিপাত শুন্যের কোটায় নেমে গেছে। গতবছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত ৪৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও ২০২১ সালে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতবছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৯ মিলিমিটার কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়নি। গত বছর মে মাসে ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছরের ২৭ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটিতে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা দেবে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রথমত দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে মৌসুমি বায়ু বিপুল পরিমাণ জলীয় বাস্প নিয়ে আসে। যখন আসে তখন শক্তি সঞ্চার করে বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি পায়। তখনই বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু এবছর মৌসুমী বায়ু দেরি করে আসছে এবং পর্যাপ্ত জলীয় বাস্প নিয়ে আসেনি; তাই বৃষ্টি হচ্ছেনা। দ্বিতীয় কারণ হলো, শুস্ক মৌসুমে পানি না পাওয়ায় নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় চার গুণ বেশি এবং পানির গতিবেগ ঠিক নেই। লবণাক্ততার কারণে পানি বাস্পীভূতের হার কমে যাওয়ায় বৃষ্টি হচ্ছেনা। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত না হওয়ার বিরূপ প্রভাবে গত ২৬ মে উপকূলে ‘ইয়াস’ নামের যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে সেটি শক্তিশালী হওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের অনাবৃষ্টিকে দায়ী করেছেন গবেষক হাফিজ আশরাফুল হক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা রজনী বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও দূষণের ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবার মেঘে জলকণার সংযুক্তির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছেনা। এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন, উৎপাদন, কৃষি ও আর্থসামাজিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পরেছে।
Leave a Reply