নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গত চৌদ্দ মাসে বরিশাল বিভাগে পুলিশের ওপর অন্তত সাতটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ প্রাণ না হারালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। প্রতিটি হামলাই হয়েছে আচমকা। কিছু বুঝে উঠার আগেই পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। আবার কাউকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। আর হামলার পর এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এগুলো স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাজ। অপরাধীদের ‘দুর্গ’ ধ্বংস করে দেওয়ায় তারা পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাবছে। আর বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এসব হামলা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যম জানা যায়- চলতি মাসের ২ জুন পটুয়াখালীর দশমিনায় গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করার পর পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের এসআই মো. তৌসিফ ইসলাম, এএসআই মো. মনির, এএসআই এরশাদ ও কনস্টেবল মো. মারুফ হোসেন আহত হন। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের এ ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে ২৭ মে বরিশাল নগরের গোরস্থান রোডে জমি বিরোধের জেরে কাউন্সিলর সাঈদ আহমেদ মান্নার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। সেদিনও কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন-২) আনোয়ার হোসেন ও এএসআই মিজান লাঞ্ছিত হন। এ ছাড়া ১১ জানুয়ারি দুপুরে উজিরপুরে ইচলাদী বাসস্টান্ডে নোমান ফকির অনিক নামের এক ইভটিজারকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এসময় ইভটিজিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থীর সহোদররা থানায় ঢুকে ইভটিজার নোমান ফকির অনিকের ওপর হামলা চালায়। সেসময় তাদেরকে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে উজিরপুর থানার ডিউটি অফিসার এসআই সুদেব, এসআই মাহাবুব ও এএসআই হাসান আহত হন। এদিকে ২০২০ সালের ২৯ মার্চ বরিশাল নগরীর চাঁদমারী এলাকায় পুলিশ অফিসার মেস সংলগ্ন ‘নূরসান ভিলা’য় মাদক উদ্ধারে অভিযান চালানোর সময় গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও কনস্টেবল মনিরুজ্জামান আহত হন। একই বছরের ৮ অক্টোবর উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের কাকরাধারী গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের সময় হামলায় এসআই নিজামুদ্দিন ও এএসআই নুরুল ইসলাম আহত হন। ১৫ অক্টোবর ইলিশ শিকার নিয়ে হিজলায় জেলেদের হামলায় নৌ পুলিশ সদস্য মনিরুল ইসলাম ও আবু জাফর আহত হন। এ ছাড়া ২০ অক্টোবর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদী সংলগ্ন খালে ইলিশ রক্ষা অভিযানে হামলা চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্যকে আহত করা হয়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অভিযানে অংশ নেয় বিএমপি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. জাকারিয়া রহমান। তবে পুলিশের ওপর সম্প্রতি হামলার বিষয়ে বরিশালের পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘বস্তি বা অপরাধ প্রবণ এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিজেদেরকে বাঁচাতে অনেক সময় পুলিশের ওপর হামলা চালায়। সবাই কিন্তু পুলিশের ওপর হামলা করে না। শুধু বরিশালে নয়, সাড়া বাংলাদেশেই পুলিশের ওপর হামলা খুব কম। তার মানে হলো- পুলিশের কাজে বেশি সহায়তা করে জনগণ।এসব হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও মনে করেন বিএমপি পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।’ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বরিশালের রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এহসান উল্লাহ্’র মোবাইলে ফোন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এদিকে সমাজ বিশ্লেষকেরা বলছে, ‘অপরাধের দুর্গ যারা তৈরী করতে চায়, তারা পুলিশকে প্রতিপক্ষ মনে করে হামলা চালাচ্ছে। এসব বন্ধে পুলিশ ভূমিকা রাখে। সুতরাং পুলিশের ওপর হামলা করবে এটা তো স্বাভাবিক। অপরাধীদের ধারণা, এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে গেলে কাজ করতে আরও সুবিধা হবে। আবার পুলিশের ওপর হামলার অনেক ঘটনা চাপা পড়েও যাচ্ছে।’
Leave a Reply