আমতলী প্রতিনিধি ॥ অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের পর শুকিয়ে মরছে খাল, সেই মৃতপ্রায় খালের তীর ঘেঁষে চলছে দখল বাণিজ্য। বিপন্ন চাওরা খাল এখন আমতলী উপজেলার ২৬ গ্রামের দুর্ভোগের বড় কারণ। আমতলী উপজেলার ২৬টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হত এই খালকে কেন্দ্র করে। চাওরা খালের মরণ দশায় জীবিকা হারিয়েছে প্রায়১০ হাজার জেলে। দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ। বরগুনার আমতলী উপজেলার আমতলী পৌরসভার একাংশ, আমতলী সদর, হলদিয়া এবং চাওরা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পায়রা নদীতে গিয়ে মিশেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে আমতলীর চাওরা খালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। তখন থেকেই পানি প্রবাহ কমতে শুরু হয় চাওরা খালে।তখন বাঁধের বিপরীত দিকে সুবন্ধি নামে একটি স্থান পানি নিষ্কাশনের জন্য খোলা রাখা হয়। এই অংশের মাধ্যমে চাওরা খালের পানি গাবুয়া এবং আগুনমুখা নদীতে ওঠানামা করত। খালের এই খোলা অংশটিও ২০০৯ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক (বরখাস্ত হওয়া ) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন তালুকদার প্রভাব খাটিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে আটকে দেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। চাওরা খালের আমতলী এবং সুবন্ধি অংশে বাঁধ দেওয়ায় ভিতরের পানি প্রবাহ সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের অভাবে চাওরা খালের শাখা প্রশাখাগুলো পানির অভাবে সম্পুর্ন মরে যেতে থাকে। মরে যাওয়া খালগুলো হচ্ছে, বলই বুনিয়া, হলদিয়ার কাউনিয়া, রামজির খাল, ঘুঘুমারি খাল, আড়ুয়াবৈড়াগি খাল, নাচনাপাড়া খাল, চিলা খাল, ছুরিকাটা খাল, লোদা খাল, চলাভাঙ্গা খাল, পাতাকাটা খাল, লক্ষীর খাল এবং কালীগঞ্জের খাল। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতায় ফসল হারাতে থাকে ১৫টি গ্রামের কৃষক। এলাকাবাসীরা জানান, মূল চাওরা খাল কঁচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচল, কালে কালে বন্ধ হয় সেচ। বদ্ধ পানিতে ক্রমান্বয়ে শুরু হয় মশা,মাছি আর সাপের উপদ্রব। কচুরিপানায় খাল ভরে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ তো দুরের কথা, কোনো পশুপাখিও এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না। শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পচে যাওয়ায় সেচ কাজেও লাগানো যাচ্ছে না। এই খালের পঁচা পানি ব্যবহারের ফলে অনেকের শরীরে দগদগে ঘাঁ হয়ে গেছে। আমতলীর তুজির ঘোজার এলাকার ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগম বলেন, খালের পানি পইচ্যা গ্যাছে, গন্ধে মোরা বাড়ি থাকতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না, চলতে পারি না, খালি গন্ধ আর গন্ধ। হেই আর মধ্যে আবার মশা মাছি আর সাপের উৎপাত। এই ভিডা ছাইরা যাইতেও পারি না আবার গন্ধ সইতেও পারি না। মোগো অইছে মরণ দশা। চদ্রা গ্রামের বাসিন্দা সবুর জান বলেন, মোরা এই খালের পানি আতে ধরতে পারি পারি না। আরি পাতিল ধুইতে পারি না। রানতে পারি পারি না। পানি আতে লাগাইলে আত চুলকাইতে চুলকাইতে ঘাও অইয়া যায়। রামজি গ্রামের সুরাত জান বলেন, দ্যাহেন স্যার দ্যাহেন দিনের বেলায় মশা আর মাছিতে জালাইয়া লইছে। এই খালে কচুরি পানা জইম্যা মোগো গরীবের অইছে মরণ দশা। পানির অভাবে ঠিক মত নাইতে পারি না, কাপরচুপর ধুইতে পারি না। এহন এই সময় মোরা এই বাপ দাদার ভিডা ছাইর্যা কোন হানে যাইতেও পারি না। আর এহন পানির পচা গন্ধে থাকতেও পারি না। দিনে মশায় জালায়। আর রাইতে ঘড়ে উডানে রাস্তায় সাপে জালায়। ঠিক মত আটতেও পারি না। আমতলী পৌরসভার ৩ এবং ৭ নং ওয়ার্ডসহ আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, মহিষডাঙ্গা, নাচনা পাড়া, পূর্ব আমতলী, আড়ুয়া বৈরাগী, চলাভাঙ্গা, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, লক্ষী, রাওঘা, কাঠালিয়া, এমপির হাট, রামজি, চিলা, ঘুঘুমারি, সোনাউটা, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এবং চাওরা ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা, কাউনিয়া, চন্দ্রা, পাতাকাটা, তালুকদার হাট, লোদাসহ ২৬টি গ্রামেও প্রায় একই চিত্র। গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এই খালের পারের অন্তত ২০টি স্থানে ভূমি দস্যুরা দখল করে খাল ভরাট করে পাকা ইমারত বানিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। চাওরা খালের সঙ্কট সমাধানে ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে, পরে তা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। এ প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃখনন, কঁচুরিপানা পরিস্কার, ৫ ব্যান্ডের স্লুইস গেইট নির্মাণ করে খালের পানি প্রবাহের গতি ফিরিয়ে আনা। কিন্ত ৪ বছর অতিবাহিত হলেও সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী শাহাবুদ্দিন পান্না জানান, চাওরা খালের সমস্যা সমাধানের জন্য সুবন্ধি বাঁধ কেটে পানিপ্রবাহ সচল করলে চাওরা খাল আবার তার প্রাণ ফিরে পাবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, চাওরা খালের সমস্যার কারণে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নিত্য দিনকার ব্যবহারযোগ্য পানি সমস্যায় ভুগছে। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে এই খালের ২৬টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আজ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। চাওরা খালের এই বাঁধ এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, চাওরা খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য যা করা প্রয়োজন এজন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দখল-দূষণে মৃতপ্রায় চাওরা খাল, বিপাকে আমতলীবাসী
আমতলী প্রতিনিধি ॥ অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের পর শুকিয়ে মরছে খাল, সেই মৃতপ্রায় খালের তীর ঘেঁষে চলছে দখল বাণিজ্য। বিপন্ন চাওরা খাল এখন আমতলী উপজেলার ২৬ গ্রামের দুর্ভোগের বড় কারণ। আমতলী উপজেলার ২৬টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হত এই খালকে কেন্দ্র করে। চাওরা খালের মরণ দশায় জীবিকা হারিয়েছে প্রায়১০ হাজার জেলে। দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ। বরগুনার আমতলী উপজেলার আমতলী পৌরসভার একাংশ, আমতলী সদর, হলদিয়া এবং চাওরা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পায়রা নদীতে গিয়ে মিশেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে আমতলীর চাওরা খালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। তখন থেকেই পানি প্রবাহ কমতে শুরু হয় চাওরা খালে।তখন বাঁধের বিপরীত দিকে সুবন্ধি নামে একটি স্থান পানি নিষ্কাশনের জন্য খোলা রাখা হয়। এই অংশের মাধ্যমে চাওরা খালের পানি গাবুয়া এবং আগুনমুখা নদীতে ওঠানামা করত। খালের এই খোলা অংশটিও ২০০৯ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক (বরখাস্ত হওয়া ) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন তালুকদার প্রভাব খাটিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে আটকে দেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। চাওরা খালের আমতলী এবং সুবন্ধি অংশে বাঁধ দেওয়ায় ভিতরের পানি প্রবাহ সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের অভাবে চাওরা খালের শাখা প্রশাখাগুলো পানির অভাবে সম্পুর্ন মরে যেতে থাকে। মরে যাওয়া খালগুলো হচ্ছে, বলই বুনিয়া, হলদিয়ার কাউনিয়া, রামজির খাল, ঘুঘুমারি খাল, আড়ুয়াবৈড়াগি খাল, নাচনাপাড়া খাল, চিলা খাল, ছুরিকাটা খাল, লোদা খাল, চলাভাঙ্গা খাল, পাতাকাটা খাল, লক্ষীর খাল এবং কালীগঞ্জের খাল। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতায় ফসল হারাতে থাকে ১৫টি গ্রামের কৃষক। এলাকাবাসীরা জানান, মূল চাওরা খাল কঁচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচল, কালে কালে বন্ধ হয় সেচ। বদ্ধ পানিতে ক্রমান্বয়ে শুরু হয় মশা,মাছি আর সাপের উপদ্রব। কচুরিপানায় খাল ভরে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ তো দুরের কথা, কোনো পশুপাখিও এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না। শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পচে যাওয়ায় সেচ কাজেও লাগানো যাচ্ছে না। এই খালের পঁচা পানি ব্যবহারের ফলে অনেকের শরীরে দগদগে ঘাঁ হয়ে গেছে। আমতলীর তুজির ঘোজার এলাকার ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগম বলেন, খালের পানি পইচ্যা গ্যাছে, গন্ধে মোরা বাড়ি থাকতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না, চলতে পারি না, খালি গন্ধ আর গন্ধ। হেই আর মধ্যে আবার মশা মাছি আর সাপের উৎপাত। এই ভিডা ছাইরা যাইতেও পারি না আবার গন্ধ সইতেও পারি না। মোগো অইছে মরণ দশা। চদ্রা গ্রামের বাসিন্দা সবুর জান বলেন, মোরা এই খালের পানি আতে ধরতে পারি পারি না। আরি পাতিল ধুইতে পারি না। রানতে পারি পারি না। পানি আতে লাগাইলে আত চুলকাইতে চুলকাইতে ঘাও অইয়া যায়। রামজি গ্রামের সুরাত জান বলেন, দ্যাহেন স্যার দ্যাহেন দিনের বেলায় মশা আর মাছিতে জালাইয়া লইছে। এই খালে কচুরি পানা জইম্যা মোগো গরীবের অইছে মরণ দশা। পানির অভাবে ঠিক মত নাইতে পারি না, কাপরচুপর ধুইতে পারি না। এহন এই সময় মোরা এই বাপ দাদার ভিডা ছাইর্যা কোন হানে যাইতেও পারি না। আর এহন পানির পচা গন্ধে থাকতেও পারি না। দিনে মশায় জালায়। আর রাইতে ঘড়ে উডানে রাস্তায় সাপে জালায়। ঠিক মত আটতেও পারি না। আমতলী পৌরসভার ৩ এবং ৭ নং ওয়ার্ডসহ আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, মহিষডাঙ্গা, নাচনা পাড়া, পূর্ব আমতলী, আড়ুয়া বৈরাগী, চলাভাঙ্গা, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, লক্ষী, রাওঘা, কাঠালিয়া, এমপির হাট, রামজি, চিলা, ঘুঘুমারি, সোনাউটা, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এবং চাওরা ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা, কাউনিয়া, চন্দ্রা, পাতাকাটা, তালুকদার হাট, লোদাসহ ২৬টি গ্রামেও প্রায় একই চিত্র। গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এই খালের পারের অন্তত ২০টি স্থানে ভূমি দস্যুরা দখল করে খাল ভরাট করে পাকা ইমারত বানিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। চাওরা খালের সঙ্কট সমাধানে ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে, পরে তা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। এ প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃখনন, কঁচুরিপানা পরিস্কার, ৫ ব্যান্ডের স্লুইস গেইট নির্মাণ করে খালের পানি প্রবাহের গতি ফিরিয়ে আনা। কিন্ত ৪ বছর অতিবাহিত হলেও সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী শাহাবুদ্দিন পান্না জানান, চাওরা খালের সমস্যা সমাধানের জন্য সুবন্ধি বাঁধ কেটে পানিপ্রবাহ সচল করলে চাওরা খাল আবার তার প্রাণ ফিরে পাবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, চাওরা খালের সমস্যার কারণে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নিত্য দিনকার ব্যবহারযোগ্য পানি সমস্যায় ভুগছে। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে এই খালের ২৬টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আজ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। চাওরা খালের এই বাঁধ এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, চাওরা খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য যা করা প্রয়োজন এজন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply