নোমান সিকদার, চরফ্যাসন ॥ চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিকট অতীতের যে কোন সময়ের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারনে চরম বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে নাভিশ্বাস উঠেছে গ্রাহকদের মধ্যে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে বরফ কলসহ ছোট-বড় কারখানার কয়েকশ’ শ্রমিক। বরফ উৎপাদন না থাকায় উপকূলের মাছঘাটগুলোতে সংরক্ষণের অভাবে পঁচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চলমান সমস্যা নিয়ে স্পস্ট কোন বক্তব্যও মিলছে না বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের থেকে। বিদ্যুতের এই অসহ্যভোগান্তিতে জনবিস্ফোরণের আশংকা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রাহকরা কথ্য-অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। চলমান পরিস্থিতে এই ক্ষোভ বিক্ষোভে রুপ নিতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও বিদ্যুতের অব্যহত এই বিপর্যয়ের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ নিরব নির্বিকার আছেন বলে গ্রহকরা অভিযোগ করছেন। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই বিদ্যুৎ না থাকা এখানে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত ইদানিং আকাশে মেঘ উঠতেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাংস্কৃতি চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে সংশ্লিস্ট বিদ্যুৎবিভাগের দায়িত্বশীলদের মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে ধোঁয়াশা আর ভোগান্তির মধ্যে আছেন উপজেলার ১লাখ ১০ হাজার গ্রাহক। ইলিশ মৌসুমে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এই ধারাবাহিকতার ফলে স্বাভাবিক উৎপাদন নেই ২৭টি বরফ মিলে। ফলে উপকূলের মাছঘাটগুলোতে পঁচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার ইলিশ মাছ। হাট-বাজার কেন্দ্রীক ছোট কারখানাগুলোর উৎপাদনের চাঁকাও থমকে যাওয়ায় করোনা কালে বিপর্যস্থ শ্রমিকের হাতগুলো বেকার হয়ে আছে। ফলে স্বপ্ল আয়ের মানুষগুলো পড়ছে বেকায়দায়। চরফ্যাসন পল্লী বিদ্যুৎ এবং ওয়েস্টার্ন জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানাযায়, চরফ্যাসনে পৌর সভাসহ ৪টি সাব-ষ্টেশনের ধারনক্ষমতা ৪০ মেঘাওয়াট। এখানে ১লাখ ১০ হাজার গ্রাহকের চাহিদাও ৪০ মেঘাওয়াট। তারপরও বিদ্যুৎ নিয়ে চলছে দূর্ভোগ। এই দূর্ভোগের কারণ হিসেবে পল্লী বিদ্যুতের চরফ্যাসন জোনাল অফিসের এজিএম মো. মইন উদ্দিন জানান, চরফ্যাসনের পৌরসভাসহ ৪টি সাব স্টেশনের চাহিদা অনুযায়ী ৬শ এমপিআর বিদ্যুৎ লোড নিলে বোরহানউদ্দিন স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বোরহান উদ্দিন সাব স্টেশনের ট্রান্সফর্মারের ধারনক্ষমতা ৪শ এমপিআর পর্যন্ত সীমিত। ওই বিদ্যুৎ সরবরাহকৃত ট্রান্সফর্মারের ধারনক্ষমতা প্রায় ৬শ এমপিআরে উন্নীত না করা পর্যন্ত চরফ্যাসন সাব স্টেশনগুলোতে চাহিদা মতো ৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ নেয়া সম্ভব হবে না। ফলে বিপর্যয়ও কাটবে না। প্রাপ্ত এই সীমিত বিদ্যুৎ দিয়ে প্রায় পৌর সভাসহ ১ লাখ১০ হাজার গ্রাহকের ক্ষোভ প্রশোমনের চেষ্টা চলছে। তবে বিদ্যুতে বিপর্যস্থ চরফ্যাসনের গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুত বিভাগের এই বক্তব্য সঠিক হলে গ্রাহকরা প্রতি ৫ ঘন্টার মধ্যে ১ ঘন্টা লোভ শেডিংয়ে থাকার কথা। সে হিসেবে গ্রাহরা দিন-রাতের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন থাকার কথা। কিন্ত এখানে ২৪ ঘন্টার দিন-রাত মিলিয়ে গড়ে ৫ ঘন্টাও বিদ্যুৎ মিলছে না। তার উপর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কোন নিশ্চয়তা যেমন নেই, তেমনি কোন ব্যাখ্যাও নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকার মধ্যে শুধু আকাশের মেঘ-বৃষ্টি আর সড়কে ভেঙ্গে পড়া গাছ কে অজুহাত হিসেবে দেখানে হচ্ছে। এভাবেই চলছে মাসের পর মাস। শীত আর বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রাহকদের গা সহ্য হয়ে গেলেও অসহ্য তাপদাহের মধ্যে তেঁতে উঠছেন গ্রাহকরা। ভোলায় রেকর্ড পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তারপরও চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ মিলছেনা। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারনে বরফ কলগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপর্যয় চলছে। বরফ উৎপাদনে বিপর্যয় থাকায় মাছঘাটগুলোতে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যই বিদ্যুৎ বিতরণে সমস্যা বলে দাবি করছেন তারা। যা গ্রাহকদের বিক্ষুদ্ধ ও সহিংস করে তুলতে পারে। ফলে যে কোন সময় গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।
Leave a Reply