দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইন্সটিটিউট প্লাবনভ’মি উপকেন্দ্র সান্তাহার একটি নড়বড়ে গবেষনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অবহেলিত এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গবেষকগণের গবেষনায় একের পর এক মিলছে চমকপদ সাফল্য। এর ফলে এই গবেষনা প্রতিষ্ঠানটি মৎস্য বিভাগের উচ্চ মহলের নিকট থেকে কুড়িয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা। বিলুপ্তপ্রায় ছোট মাছ ভেদা ও বাতাসি’র কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সাফল্যে পর এবার সাফল্য মিলেছে সংকটাপন্ন পিয়ালী মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল। এর পুর্বে বিলুপ্তপ্রায় কুচিয়া’র নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন এবং গ্রীনহাউস নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছের কৃত্রিম প্রজনন মৌসুম দুই মাস এগিয়ে নিয়ে আসার কৃতিত্বপুর্ণ সাফল্য দেখিয়েছেন বামগই প্লাবনভ’মি উপকেন্দ্র সান্তাহারের ইনচার্য উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.ডেভিট রিন্টু দাসের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল। ড.ডেভিট রিন্টু দাস বলেন, ভেদা, বাতাসি এবং পিয়ালীসহ বিলুপ্তপ্রায় ও সংকটাপন্ন ছোট প্রজাতির প্রায় ৩০ প্রকারের মাছের কৃত্রিম প্রজননে পোনা উৎপাদন কৌশল আবিস্কার করা নিয়ে গবেষনা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। ইতিমেধ্য প্রথম তিনটিতে সফলতা মিলেছে। আরো ২৫ জাতের ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষনা কার্যক্রম চলছে। অচিরেই আরো কয়েকটি মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তাঁর নেতৃত্বে এই গবেষনা কাজে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান পাপ্পু এবং মালিহা খানম। তিনি বলেন, সদ্য সাফল্য পাওয়া পিয়ালী মাছটি মলা মাছের চেয়ে আকারে একটু বড়। সুস্বাদু পিয়ালী মাছ এক সময় আত্রাই, বাঙ্গালী, পদ্মা ও যমুনা নদীতে মিলত প্রচুর পরিমানে। কিন্তু অতিমাত্রায় আহরণ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারনে বর্তমানে সংকটাপন্ন মাছের তালিকায় উঠেছে। ফলে হাটে-বাজারে তেমন একটা মেলেনা। তবে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পাওয়া পোনা উৎপাদন কৌশল মৎস্য চাষী পর্যায়ে দেওয়া হবে। এতে করে অচিরেই বিলুপ্তপ্রায় ও সংকটাপন্ন মাছগুলো পাওয়া সহজলভ্য হবে। উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিট রিন্টু দাস বলেন, সর্বশেষ সাফল্য পাওয়া সংকটাপন্ন পিয়ালী মাছ সংগ্রহ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যমুনা, বাঙ্গালী, পদ্মা ও আত্রাই নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা চষে বেড়িয়ে মেলে মাত্র পাঁচ জোড়া পরিপক্ক মাছ। সে মাছ গবেষনা কেন্দ্রের পুকুরে নিবিড় ভাবে প্রতিপালন করা হয়। এসময় মাছটির খাদ্য ও খাদ্যাভাস পর্যবেক্ষন করে সে ভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। গবেষনায় তাঁরা দেখতে পায় যে, মে থেকে আগস্ট এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মৌসুমে প্রজননক্ষম পরিপক্ক মা মাছ পাওয়া যায় এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জলাশয়ে পিয়ালী মাছের উপস্থিতি মেলে। ফলে প্রমানিত হয় যে পিয়ালী মাছের উর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি। একটি প্রজননক্ষম পরিপক্ক পিয়ালী মা মাছ দেড় থেকে তিন হাজারটি ডিম পাড়ে। গবেষনাকালে গবেষকরা আরো দেখতে পায় যে, একটি পরিপক্ক মা পিয়ালী মাছ ওজনে সাড়ে তিন থেকে ৬ গ্রাম হলেই প্রজনন উপযোগী হয়। তবে পুরুষ পিয়ালী মাছ স্ত্রী পিয়ালী থেকে ওজনে একটু বেশী হয়।
Leave a Reply