গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ শুক্রবার রাতে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্রি গ্রামে সুদখোর মহাজনদের গালীগালাজ, উৎপাত ও প্ররোচনায় যুগল সোম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বিষপান করে আত্নহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। গুরুতর অবস্থায় ওই রাতেই তাকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। চিকিৎসাধীন স্বামীর বিছানার পাশে বসে যুগল সোমের স্ত্রী কবিতা সোম জানান, তারা খুবই দরিদ্র। তার স্বামী যুগল সোম ওই গ্রামের একজন ক্ষুদ্র পানচাষী ও বিভিন্ন হাট বাজারের খুচরা পান বিক্রেতা। নিজের সামান্য জমিতে পান চাষের পাশাপাশি যুগল সোম এলাকার পান চাষীদের কাছ থেকে পাইকারীতে পান কিনে নিজ উপজেলা ও পার্শ্ববতি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের টল ঘরে বসে খুচরা পান বিক্রির ব্যবসা করছেন। এতে দুই ছেলে, মেয়ে ও স্বামী স্ত্রী মিলে তাদের ৪ সদস্যের সংসার ঠিক ভাবে চলছিল না। ফলে এলাকার লোকজনের সাথে মিলে তিনি একটি গ্রাম্য সমিতি করেন। সংসার চালাতে গিয়ে ওই সমিতি থেকে গত বছর তিনি ৩০ হাজার টাকা লোন নেন। এ ছাড়া একই গ্রামের সুদখোর মহাজন বাদল রায়, বাদল কর ও নির্মল দে’র কাছ থেকে তিনি বেশ কিছু টাকা সুদে আনেন। কার কাছ থেকে কত টাকা এনেছেন তা আমি জানিনা। দীর্ঘদিন ধরে মহাজনদের টাকার সুদ ও লোনের কিস্তি সঠিকভাবে দিয়ে আসছিলেন। করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হলে তিনি বিপাকে পড়ে যান। ফলে সঠিক ভাবে মহাজনদের সুদ ও লোনের কিস্তি দিতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় ওই তিন সুদখোর মহাজন তাকে গালীগালাজসহ নানা ভাবে অপমান অপদস্ত করে আসছিলেন। তাদের উৎপাতে যুগল সোমের জীবন বিষিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যার পরে সুদখোর মহাজন বাদল রায় দুই দফায় যুগল ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী কবিতা সোমের ওপর চড়াও হয়ে তাকে গালীগালাজ করে ফিরে যায়। হাটে পান বিক্রি শেষে রাত পৌনে ১০টার দিকে যুগল সোম বাড়িতে পৌছলে সুদখোর মহাজন বাদল রায় তাৎক্ষনিক ওই রাড়িতে গিয়ে টাকার সুদের জন্য যুগল রায়ের সাথে দুর্ব্যাবহার, অপমান অপদস্ত ও গালীগালাজ শুরু করে। এ সময় অভাবী যুগল সোম বলেন, আপনি টাকা পরিশোধের সুযোগ নাদিয়ে আমার সাথে এরকম করলে আমার তো বিষখেয়ে অথবা গলায় দড়ি দিয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নেই। তখন ক্ষিপ্ত রাদল রায় বলেন তুই মর তাতে আমার কি। এক পর্যায়ে অপমানের ক্ষোভে, দুঃখে রাত সোয়া ১০টার দিকে বাদল রায়ের সামনেই যুগল সোম তার ঘরে রাখা পান বরজের কীটনাশক এনে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। এ সময় তার স্ত্রী সন্তানরা দৌড়ে এসে তাকে ঠেকাতে ব্যার্থ হয়। কবিতা সোম অভিযোগ করেন, সুদখোর মহাজন বাদল রায়ের সামনে আমার স্বামী বিষপান করলেও সে আমার স্বামীকে নিষেধ করেনি বা তার বিষপান ঠেকায়নি। বিষপানে অসুস্থ্য যুগল সোমকে ছটফট করতে দেখে সে ওই বাড়ি ত্যাগ করে। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতেও বাদল রায় এগিয়ে আসেনি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান সোহাগ বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত বাদল রায় বলেন, আমার কাছ থেকে যুগল ৮৪ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি আমার টাকার জন্যও নয় সমিতির টাকার জন্য তাকে চাঁপ দিয়েছি। কোন দুর্ব্যাবহার বা গালীগালাজ করিনি। আমি টাকা চাইতে যাওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে যুগল বিষ খায়। সে বিষ খাওয়ার পর তার ছোটভাই মিলন সোম আমাকে ডাক্তার ডেকে আনতে বললে আমি গ্রাম্য ডাক্তার গৌতম করকে ডেকে আনি। একই ভাবে বাদল কর বলেছেন তিনি ৫০ হাজার টাকা পান। তবে তিনি কোন দুর্বাবহার বা গালীগালাজ করেনি। নির্মল দে’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী কাজল দে বলেন আমার স্বামী যুগলের কাছে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পান। যুগল আমার স্বামীর বেয়াই হন। যুগলের স্ত্রী কবিতা মিথ্যা বলছেন। নির্মল টাকার জন্য কখোনোই যুগলের সাথে কোন দুর্ব্যাবহার করেনি।
Leave a Reply