দখিনের খবর ডেক্স ॥ সারাবিশ্বের মতো কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ পাল্টে দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। এই রমজান মাসে যখন আওয়ামী লীগ ইফতার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, এবার তা নেই বললেই চলে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে থাকা মানুষজনের কাছে ত্রাণ আর ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রমজান মাসে ইফতার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছন্দপতন ঘটলেও মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ বাড়িয়েছে। সারাদেশেই রমজান মাসে মানুষের মধ্যে উৎসবমূলক ভাব থাকলেও এবার অন্যরকম এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষকে সচেতন করে পাশে দাঁড়িয়ে সেই আতঙ্ক বা ভয়কে জয় করতে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
ইফতার মাহফিলের মতো মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা না হলেও ভিডিও কনফারেন্স করে করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। প্রতিদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সবকিছু মনিটরিং করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। দলের প্রধান শেখ হাসিনাও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে করণীয় সম্পর্কে অবগত করছেন। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার এ দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পবিত্র রমজান মাসে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উচ্ছ্বাস বিরাজ করে। এবার মানুষ নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য করেছে করোনা পরিস্থিতি। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকলেও আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
‘আগে আমরা একভাবে কাজ করতাম, এখন পরিস্থিতি অন্যভাবে কাজ করতে বাধ্য করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগে সাধারণ মানুষকে নিয়ে ইফতার মাহফিল করতো। এখন তাদের কাছে ইফতার-ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ সবসময় ত্যাগের রাজনীতি ধারণ করে এদেশের মানুষের কল্যাণ। করোনা মোকাবিলায় নেতাকর্মীরা সেটির প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে’।
প্রতিবছর রমজানের পুরো মাস জুড়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো ইফতার মাহফিলে ব্যস্ত সময় পার করে। দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এতিম, ওলামা-মাশায়েখ, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। আওয়ামী লীগ, দলের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি থাকে, থাকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আন্তঃরাজনৈতিক সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগও। দলের কর্মীরা নেতার সঙ্গে আর নেতাকর্মীদের সঙ্গে মেলবন্ধনের সুযোগ পায়।
কিন্তু এ বছর করোনার প্রভাবে পুরো আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচির গতিপথই পাল্টে দিয়েছে। নেই কোনো ইফতার মাহফিল। ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে নেই নেতাকর্মীদের মেলবন্ধন, সাক্ষাৎ। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে খারাপ লাগা থাকলেও পরিস্থিতি তাদের দায়িত্ববান করে তুলেছে। শিখিয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে।
ইফতার মাহফিল কেন্দ্রিক কর্মসূচিতে সবার সঙ্গে ভাব-কুশল বিনিময়ের সুযোগ থাকতো। এখন তা নেই বলে ওই সময়গুলো মিস করেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আগে মানুষজনকে নিয়ে ইফতার করতাম, এখনে তাদের কাছে ইফতার পৌঁছে দিচ্ছি। শেখ হাসিনার নির্দেশের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে পারছি; এটা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনেক বড় পাওয়া।
দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগের রমজান মাস আর এবারের রমজান মাসের মধ্যে অনেক তফাৎ। তবে প্রত্যেকে আমরা দূরে থাকলেও একই অনুভূতি লালন করি, সেটি হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। অন্য সময়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ইফতার আয়োজন করতাম। এখন মানুষকে ঘরে থাকার বিষয়ে সচেতন করছি, ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। পুরো দেশেই কিন্তু নেতাকর্মীরা এটা করছে সরকারের পাশাপাশি।
‘এই রমজানে ত্রাণ আর ইফতার নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সময়টা পার করতে চাই। রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ সবময় এক থাকে না। এখন শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। নেতাকর্মীরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটাই এই সময়ের রাজনীতি। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি এটা বড় কথা’, বলেন তিনি।
Leave a Reply