দখিনের খবর ডেক্স ॥ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের করা আলাদা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রয়েছে। কিন্তু সময় আবেদনের কারণে এ আপিল শুনানি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় মামলাটি ১১৮ নম্বর ক্রমিকে ছিলো।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আসামিপক্ষের সময় আবেদনের কারণে শুনানি হচ্ছে না। এখন দেখা যাক, করোনা পরিস্থিতির পর কোর্ট খুললে কি হয়। এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের মৃত্যুদন্ড কমে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ আলাদা লিভ টু আপিল করে। এছাড়া দন্ডিত আসামিরাও আলাদা লিভ টু আপিল করে।
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হয়।
২০১৬ সালের ১৫ জুন আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল মামলার রায়ে ১১ জনকে খালাস দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতে দন্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আগে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত।
বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড থেকে খালাস পাওয়া ওই ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে। মারা যাওয়া দুই আসামির আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। আর মামলাটির মোট ৩০ আসামির মধ্যে দু’জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।
চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।
মৃত্যুদন্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ওমশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। বিচারিক আদালতে ফাঁসির দন্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায় আল আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট। ৩০ আসামির বাকি দু’জন কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু বিচারিক আদালত থেকেই খালাস পেয়েছিলেন। এরপর যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের মৃত্যুদন্ড কমে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে সে সব ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ আলাদা লিভ টু আপিল করে। এছাড়া দন্ডিত আসামিরাও আলাদা লিভ টু আপিল করে।
Leave a Reply