নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে নিজ ঘরে আওয়ামী লীগ নেতার পিতা হোমিও চিকিৎসক মঞ্জুর মোরর্শেদকে হত্যাকা-ের ঘটনায় তিন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ডাকাত দলের মোট সাত সদস্যকে শনাক্ত করেছেন তারা।
ঘটনার ২১ দিন পরে বৃহস্পতিবার তাদের তিনজনকে গ্রেফতার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকাধীন শের-ই বাংলা সড়কের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম শাকিল (২৮), আলমগীর হাওলাদার (৪০) ও পটুয়াখালী আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য জামাল হোসেন। এদের মধ্যে শাকিল ও আলমগীরকে শের-ই বাংলা সড়ক এবং জামালকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নগর পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে মামলার তদন্ত এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সার্থে পলাতক আসামিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘গত ১১ আগস্ট নগরীর এয়ারপোর্ট থানাধীন কাশিপুর চহঠা এলাকায় নিজ বাড়িতে হত্যাকা-ের শিকার হন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল মোরশেদ প্রিন্স এর বাবা হোমিও চিকিৎসক এবং সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মঞ্জুর মোরশেদ। ওই ঘটনায় ১২ আগস্ট এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
বিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনাটি পুরোটাই ক্লু-লেস ছিলো। ওই ঘটনার পূর্বে গত ৩ জুলাই এয়ারপোর্ট থানাধীন ফিসারী রোড এলাকায় জনৈক মনোয়ার হোসেন এর বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতদল ওই বাড়ি থেকে ৫৩ হাজার টাকা এবং ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। যে ঘটনায় গত ৫ জুলাই এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করা হয়।
তিনি জানান, দুটি ঘটনার মোডাস অপারেন্ডি একই রকম হওয়ায় থানা পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কে ছায়া তদন্তের নির্দেশ প্রদান করা হয়। ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে পেশাদার ডাকাত দলের দুই সদস্য তরিকুল ইসলাম শাকিল ও আলমগীর হাওলাদারকে শের-ই বাংলা সড়ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা এবং ডাকাতির দুটি ঘটনায় তারা তাদের ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিলে সংঘটিত করে বলে ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালী হতে ডাকাত দলের অপর সদস্য জামালকে গ্রেফতার করেন। পাশাপাশি ডাকাতি ও হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ঘর ভাঙার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘সাত সদস্যের এই ডাকাতদলটি সংঘবদ্ধ। তারা ডাকাতির জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে বরিশালে থাকতো। ডাকাতির সময় ঘরে ঢোকার পর তারা হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটাতো। ইতোমধ্যে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সাত সদস্যকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
বিএমপি কমিশনার দাবি করেন, ‘হোমিও চিকিৎসকের বাড়িতে চুরি সংঘটিত হয়েছে। ওই ঘটনা দেখে ফেলে ডাক-চিৎকার করতে চাওয়ায় মঞ্জুর মোরশেদকে হত্যা করে পালিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এই ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত তিন ডাকাত সদস্যকে দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের তিনজনকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার।
Leave a Reply