বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
ফুলকুঁড়ি আসর এর ফাইনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অনুষ্ঠিত আওয়ামী ঘরানার বিতর্কিত লোকদের দিয়ে উজিরপুর উপজেলা শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সান্টু খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় গৌরনদীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে এতিমখানা ও মাদ্রাসার দরিদ্র, অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কারাবন্ধী ও রাজপথে সাহসী সৈনিকদের সম্মানে ইফতার দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায়, দখিনের খবর পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙে কোটি টাকার লুণ্ঠিত মালামাল বাড়িওয়ালার পাঁচ তলা থেকে উদ্ধার, মামলা নিতে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা গলাচিপা উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি হাফিজ, সম্পাদক রুবেল চোখের জলে বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী বাবুলকে চির বিদায় বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন কারামুক্ত উচ্চ আদালতে জামিন পেলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির মীর জাহিদসহ পাঁচ নেতা
যশোহর থেকে বউ নিয়ে ঢাকার পথে র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো রাজাপুরের সেই লিমন

যশোহর থেকে বউ নিয়ে ঢাকার পথে র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো রাজাপুরের সেই লিমন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ২০১১ সালে র‌্যাবের গুলিতে এক পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের সেই লিমন হোসেন (২৮) আজ শুক্রবার বিয়ে করেছেন। সকাল ৭টায় রাজাপুরের নিজ বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়ে ১১টায় যশোহর শশুর বাড়ি পৌছে।যশোহর জেলার অভয় নগরের সরখোলা গ্রামের কনের বাড়িতেই আজ শুক্রবার দুপুরে ২ লাখ টাকা দেনমহরে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বিকেল ৪ টায় অভয় নগরের শশুর বাড়ি থেকে ঢাকা রওয়ানা হয় বলে লিমন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে লিমনের গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিমনের পরিবার, সহপাঠী ও আত্মীয় স্বজনরা অংশ নেন। লিমন হোসেন জানান, পরিবারের ইচ্ছায় বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এবার জীবনে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে চান তিনি।
লিমনের স্ত্রী রাবেয়া বশরী জানান, লিমন প্রতিকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে এ প্রর্যন্ত এসেছে । তার সব কিছু শুনে আমার ভাল লেগেছে । দাম্পত্য জীবনেও তিনি দায়িত্বশীল হবেন বলে আশা করি। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাবের গুলিতে পায়ে জখম হয় লিমনের। পরে চিকিৎকের পরামর্শে এক পা কেটে ফেলতে হয়। লিমন হোসেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র। তৎকালিন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয় র্যাফবের অভিযান। ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের পা হারানো সেই কিশোর এখন সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের প্রভাষক। বিয়ে করে এখন তিনি সংসার জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।
গুলিবিদ্ধ লিমনকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে র্যা বের ডিএডি লুৎফর রহমান বাদী হয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দার ও লিমনসহ ৮ জনকে আসামী করে অস্ত্র আইনে একটি এবং সরকারিকাজে বাধা দানের অভিযোগে ২টি মামলা দায়ের করে। গুরতর আহত লিমনকে ভর্তি করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। যথাযত চিকিৎসার অভাবে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ লিমনের বাম পা হাটু থেকে কেটে ফেলা হয়। চিরতরে প্গু হয়ে যায় লিমন ।
এ ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল র্যা ব-৮ এর ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ছেলে লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন। আদালতের নিদেশের ১৬ দিন পর ২৬ এপ্রিল ২০১১ রাজাপুর থানায় র্যােবের ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছজনের নামে মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন কর্পোরাল মাজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল আবদুল আজিজ, নায়েক মুক্তাদির হোসেন, সৈনিক শ্রী প্রহল্ল্াদ চন্দ্র এবং সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাস।
পুলিশ লিমন হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট র্য্বা সদস্যদের নির্দোষ উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। লিমনের মা হেনোয়রা বেগম পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট নারাজী দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারাজী আবেদন খারিজ করে দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. শাহীদুল ইসলাম। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন লিমনের মা। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচজন জেলা ও দায়রা জজ ২৬ বার রিভিশনের শুনানী গ্রহণ করেন এবং কোন আদেশ না দিয়ে অধিকতর শুনানীর জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৬ বার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল ৪২তম শুনানীর দিন ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান র্যা বের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুর হওয়ায় লিমন হত্যাচেষ্টায় র্য্বা সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। মামলা নথি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সেলিম রেজা লিমন হত্যাচেষ্টা মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয় কমপক্ষে সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা দিয়ে মামলার তদন্ত করাতে হবে। এ আদেশ নিয়ে নানা জটিলতার পর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআইর (হেডকোয়াটার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। গত ফেব্রয়ারি মাসে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন।
অপর দিকে লিমনসহ আট জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে যে দুটি মামলা দায়ের করেছিল ওই মামলা থেকে সরকার লিমনের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩ সালের ১০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকে লিমনের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহের জন্য আদেশ জারি করেন। এ আদেশ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ঝালকাঠি জেলা জজ ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে প্রেরণ করা হয়। ঝালকাঠি আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল মান্নান রসুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারক কিরণ শঙ্কর হালদার ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই অস্ত্র মামলার দায় থেকে লিমন হোসেনকে অব্যহতির আদেশ দেন। ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. আবু শামীম আজাদ সরকারের একই সিদ্ধান্তে সরকারি কাজে বাধা দানের মামলা থেকে লিমনকে অব্যহতি দেন ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর। অপরদিকে যে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোরসেদ জমাদ্দারকে ধরতে গিয়ে লিমনকে গুলি করেছিল র্য্বা সেই মোরসেদ জমাদ্দারসহ অপর সাত আসামি র্যা বের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৪ আদালত থেকে ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এবং সরকারি কাজে বাধা দানের মামলায় মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে ২৯ মার্চ বেকসুর খালাশ যায়। রিভিশনের শুনানীতে লিমনের মায়ের আইনজীবীরা এ বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন।
এ দিকে গুলিবিদ্ধ লিমনের একটি পা কেটে ফেলার পরে ২০১১ সালের ৯ মে হাইকোর্ট লিমনের জামিন মঞ্জুর করে। লিমন জামিনে মুক্ত হওয়ার পর লিমনের উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষ লিমনকে আর্থিক সাহায়তা করে। ঢাকার সাভারের সিডিডি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিমনকে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেয়। এই নকল পায়ে ভর করে লেখা পড়া করে ২০১৩ সালে লিমন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। একই বছর লিমন ডা. জাফরউল্লাহর সহযোগিতায় সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে এলএল.বি অনার্সে ভর্তি হন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে লিমন এলএল.বি অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষা সহকারী পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি হয় লিমনের।
পা হারানোর সেই দুর্বিষহ দিন পেরিয়ে ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধে গর্বিত লিমনের বাবা-মা। ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তাঁরা। লিমনের মা হেনোয়রা বেগম বলেন, র্যা বের ভুলের কারনে আমার ছেলে একটি পা হারিয়েছে । আমার ছেলের পা কোনদিন পাওয়া যাবে না ঠিকই কিন্তু লিমন এ দেশের মানুষের ভাললোবাসা পেয়েছে । লিমন পড়াশোনা করে যতটুকু অর্জন করেছে তার পেছনে সবচেয়ে বেশী অবদান সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংগঠন, আইন সালিশ কেন্দ্র, মানবাধিকার কমিশন ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ স্যারের ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com