নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ভোলার দৌলতখানের হাজিপুর ইউনিয়নের ছয় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে । উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মেঘনার বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরে ঐতিহ্যবাহী হাজিপুর ইউনিয়ন অস্তিত্ব। ওই ইউনিয়নেই শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্ম। এক সময় মেঘনার প্রবল ভাঙনে ওই ইউনিয়নটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
পরবর্তীতে হাজিপুর ইউনিয়নের সীমানায় মেঘনার বুকে জেগে উঠে নতুন চর। ওই চরে হাজিপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের বসবাস ছিল। কৃষি কাজ, মৎস্য আহরণ ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখানকার মানুষ। গত দুইমাসে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের ৪২০টি ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে বাস্তুহারা হয়ে পড়ে ইউনিয়নের ছয় শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ফসলি জমি, বসতভিটা, মাছের ঘের। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও দেখা দেয়। বসতভিটা, জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো এখন দিশেহারা। এদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, কেউবা বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়ে পরিবারসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এছাড়া নদীর গর্ভে চলে গেছে ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে, হাজিপুর ‘চরে’ মাননীয় প্রধনমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ২০১৭-২০১৮ গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী আবাসনের লক্ষ্যে ছিন্নমূল পরিবারের জন্য ৪২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যার প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওই গুচ্ছগ্রামের ঘরেই নিরাপদে বসবাস করছিলেন অসহায় পরিবারগুলো । সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনার ভাঙনে হাজিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার। মেঘনার তীব্র ¯্রােতে যেকোন মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনের তীব্রতায় চরের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নটির অস্তিত্ব। ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে এখনও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নুরজাহান বেগম । ওই একটি ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে আরও ২টি পরিবার। নুর জাহান জানায়, ‘কোথাও যাওয়ার উপায় নেই; তাই নদীর তীরে তারা চরম আতঙ্কের বসবাস করতে হচ্ছে। ভাঙন কবলিত হাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানায়. মেঘনার প্রবল ভাঙনে এ চরের আবাসনের ৪২০টি ঘরের মধ্যে ২টি ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলো নদীতে চলে গেছে। যারা এখনও টিকে আছে, তাদেরও নির্ঘুম রাত কাটছে। যেকোনো মুহুর্তে মেঘনার গর্ভে বিলীন হতে পারে শেষ তাদের আশ্রয়স্থল।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানায়, ২০ বছর ধরে তাদের পরিবার এই চরে বসবাস বরে আসছিল। এখন চরে আর বসবাসের সুযোগ নেই। তাদের জমি-জমা, বসতঘর সবকিছুই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইউপি সদস্য মিজান জানান, মেঘনার ভাঙনে এ চরের অনেক বাসিন্দা বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে । তীব্র ভাঙনে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । এ বিষয়ে ভোলা জেলা পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছানুজ্জামানের মুঠেফোনে কল করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Leave a Reply