নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা ও ডেঙ্গু রোগের মধ্যেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে দিনদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা সেবা বিঘিœত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের ১টি মাত্র মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪টি ইউনিট করে মহিলা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ৩টি মেডিসিন ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু মহিলা ওয়ার্ডে রোগীরা ঠাসাঠাসি করে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ব্যাপক হারে রোগী ভর্তি হওয়ার কারনে ঠিক মত চিকিৎসাও প্রদান করছেন না এখানকার ডাক্তাররা। যে কারনে ২/১ দিন পরেই এখানকার রোগীদের হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধু করোনা মহামারী নয়, যুগ যুগ ধরে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে এ প্রক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত এ বিষয়টি উপেক্ষা করে আসছে।
সম্প্রতি বাউফল উপজেলা থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সালমা বেগম বলেন, ‘আমি বুকে ব্যাথা নিয়ে রাতে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু বুকে ব্যাথা ভালো না হতে সকালেই আমার হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বরিশাল শহরের বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষিকা রোমানা আক্তার বলেন, আমার নিকট আত্মীয় কহিনুর কেগমের স্ট্রোক হওয়ায় এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় কহিনুর মারা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে শেবামেক হাসপাতালে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে পেয়িং বেডও ছিল। বর্তমানে রোগী বৃদ্ধির কারনে এখান থেকে পেয়িং বেড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পূর্বের তুলনায় এই ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশালের স্থায়ী বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, যুগ যুগ ধরে এই হাসপাতালে একটি মাত্র মেডিসিন ওয়ার্ডে নারীদের নসেবা কার্যক্রম চলছে। এতদিনেও বিষয়টি কেন কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি তা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া এই ওয়ার্ডে ৬৪ জন নার্স রয়েছেন। যারা অক্লান্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে দায়িত্বরত একাধিক নার্স জানান, বেডে রোগী থাকলে কোন ঝামেলা হয় না। কিন্তু ফ্লোরে অতিরিক্ত রোগী থাকায় তাদের শরীরে ইনজেকশন পুশ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়। কারন শত শত রোগীকে প্রতিদিন ইনজেকশন দিতে হলে নুয়েনুয়ে উঠবস করতে হয়। এতে আমাদের কোমড়ে সমস্যা হয়। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলেও রোগিদের সেবায় বিঘিœত ঘটছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নার্স বলেন, আমার ২৮ বছরের চাকুরী জীবনে দেখেছি এই হাসপাতলে একটি মাত্র মেডিসিন ওয়ার্ডেই মহিলা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। পূর্বের তুলনায় এখন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবা দিতে কষ্ট হলেও সেবা বিঘিœত হচ্ছে না।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা: এস.এম.মনিরুজ্জামান বলেন, ‘যুগযুগ ধরে একটি মাত্র মেডিসিন ওয়ার্ডে আমরা নারীদের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এরকমই চিকিৎসা সেবা চলে আসছে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করনীয় নেই। তবে করোনা মহামারী গেলে, নতুন ভবনে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানান্তর করা হবে।’
Leave a Reply