নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গভীর সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে ১১ জেলেসহ ফিশিং বোট ডুবির ঘটনার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি ভোলার আট জেলের। নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের চলছেন শোকের মাতম। এখনও তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন স্বজনরা। ফিশিংবোটের মালিক নিখোঁজ মো. নিরব মাঝির স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, তার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অনেক ধার-দেনা করে ফিশিং বোটটি করেছিলেন তিনি। এখনও কয়েক লাখ টাকা দেনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাগরে ফিশিংবোট ডুবির ঘটনায় আমার স্বামী বেঁচে আছে না কি মারা গেছে আমরা এখনও জানিনা। আমার স্বামী ছাড়া এত বড় পরিবার পরিচালনা করা সম্ভব না। এখন কে আমার সংসার চালাবে। কে আমার ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ দেবে। আমার এখনও বিশ্বাস তিনি বেঁচে আছেন। আমি সরকারের কাছে দাবি করি তারা বেঁচে থাকলে তাদের দ্রুত আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দেন। নিখোঁজ জেলে মো. ইউসুফের বাবা মো. আলতু মাতাব্বর জানান, তিনি ও তার ছেলে ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে নিরব মাঝির ফিশিংবোটে করে মাছ শিকার করে আসছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই ফিশিং বোটে তারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় যেতে পারেননি। তার ছেলের সন্ধান চান তিনি। নিখোঁজ ইউসুফের স্ত্রী শাহানুর বেগম বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সময় আমার ছেলে তাকে যেতে না করে। তখন তিনি বলেন, ছোট মানুষ ভয় পায়, এজন্য এসব বলে। তুমি ভয় পেওনা। এবার সাগরে যাই দ্রুত ফিরে আসবো। এরপর আর সাগরে মাছ ধরতে যাবো না। ফিরে এসে নদীতে মাছ ধরবো। ৬ দিন ধরে আমার স্বামীর কোন সন্ধান পাইনা। আমি ছোট ছোট ৪ সন্তান নিয়ে এখন কি করবো, কিভাবে সংসার চালাবো, কি খাবো। জীবিত ফিরে আসা তিন মাঝি মো. সিরাজ, জাহাঙ্গীর ও মজিব হোসেন জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে ভেলুমিয়া থেকে গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে উদ্দেশ্যে রওনা হন মোট ১১ জেলে। পরে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে তারা ঝড়ের কবলে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডুবে যায় তাদের ফিশিংবোটটি। নৌকা ডুবে গেলে বাঁশ ও বয়া নিয়ে সাগরে ভাসতে থাকেন। সন্ধ্যার পর দূরে আরেকটি ফিশিংবোট দেখে চিৎকার করতে থাকেন তারা। চিৎকার শুনে ওই ফিশিংবোটটি তাদের উদ্ধার করে। পরে তারা ওই ফিশিংবোটে ডুবে যাওয়া স্থানে গেলেও ট্রলারটি দেখতে পাননি। তারা আরও জানান, দীর্ঘ সময় সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের শরীর ও চোখে বালি প্রবেশ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ আছেন-ফিশিংবোট মালিক মো. নিরব মাঝি ও তার ছেলে মো. রুবেল এবং তাদের সঙ্গী জেলে রফিকুল ইসলাম মাঝি, শহীদ মাঝি, বজলুল রহমান মাঝি, দেলোয়ার মাঝি, মো. ইউসুফ ও সিরাজ মাঝি। সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মহসনি খান জানান, সাগরে ফিশিংবোট ডুবির ঘটনার দুইদিন পর খবর পেয়ে নিখোঁজ জেলেদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তারা জীবিত আছেন কি না তা জানা যায়নি। তবে তারা বেঁচে থাকলে যেন দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারে এবং যদি মারা যান তাহেল তাদের মরদেহ যেন স্বজনরা দাফন করতে পারেন সে জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি। এছাড়াও আহত জেলেদের চিকিৎসা এবং নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. খন্দকার শাফকাত হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা জীবিত জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছি।
Leave a Reply