নিজস্ব বার্তা পরিবেশক॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৯ মে পর্যন্ত ৭৩ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের ২৩ জন চেয়ারম্যান, ৩৭ জন সদস্য, ৯ জন ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য, উপজেলা পরিষদের একজন ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের একজন সদস্য এবং দুই জন পৌরসভার কাউন্সিলর রয়েছেন।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব জনপ্রতিনিধির বরখাস্ত হওয়ার পেছনে মোটা দাগে ৬ ধরনের কারণ রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই অর্থাৎ ৬৭ জন বরখাস্ত হয়েছেন করোনাকালে কর্মহীন, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণের চাল ও নগদ অর্থ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ভিজিএফ ও ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়। এর বাইরে দুই জন ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত হয়েছেন ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে’ সরকারের অনুমতি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ায়। একজন ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত হন ত্রাণ চেয়ে সরকারি হট লাইন ৩৩৩ নম্বরে এক গ্রামবাসী ফোন দেওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধরের কারণে। আরেক ইউপি সদস্য বরখাস্ত হন করোনার সময় চিকিৎসাসেবায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে। একজন করোনার সময় নিজ এলাকায় থাকার নোটিশ পেয়েও অনুপস্থিত থাকায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তবে আরেক ইউপি সদস্য বরখাস্ত হন একবারেই ভিন্ন কারণে। করোনাকালে লোকসমাগম নিষেধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করে বোল্ড আউট হয়েছেন তিনি।
এদিকে ত্রাণ চুরি বা বিতরণে অনিয়মে এসব জনপ্রতিনিধির মধ্যে অনেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন বা দুদকের দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার। কেউ কেউ ঘটনার পরপরই চলে গেছেন আত্মগোপনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া এসব জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৫৩ জন আওয়ামী লীগের, ১৪ জন বিএনপির, একজন ওয়ার্কার্স পার্টির ও ৫ জন স্বতন্ত্র। আবার বরখাস্তের খাতায় আওয়ামী লীগের তালিকাভুক্ত যেসব জনপ্রতিনিধি তাদের অনেকেই নির্বাচনের সময় নৌকা প্রতীক কিংবা সদস্যপদে দলের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের অনেকেই এখনও মূলদল বা অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদের দায়িত্বে রয়েছেন। আবার অনেকের দল থেকে পদ চলে গেলেও এখনও দলীয় পরিচয়েই চিহ্নিত তারা। তবে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর দল থেকেও অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই তালিকায় আবার এমন কিছু জনপ্রতিনিধি আছেন যারা ভিন্ন দল থেকে এই সরকারের গত গত দুই মেয়াদের শাসনামলে আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। অবশ্য ত্রাণ চুরির অভিযোগে মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্তের সঙ্গে সঙ্গে তারা দল থেকেও বহিষ্কার হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়নি। তবে দলের কিছু বিদ্রোহী নেতা তখন অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। বরখাস্তের তালিকায় উল্লিখিত ১৪ জনই সে হিসেবে বিএনপির দলীয় বিদ্রোহী।
বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও দুই পৌরসভার কাউন্সিলর সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইউনিয়ন পরিষদের ২৩ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২১ জন আওয়ামী লীগের ও ২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত , ৩৭ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ২২ জন আওয়ামী লীগের, ১০ জন বিএনপির, ১ জন ওয়ার্কার্স পার্টির ও ৪ জন স্বতন্ত্র।
সাময়িক বরখাস্ত ইউপি সদস্যদের বিভাগভিত্তিক তালিকা
ইউপির সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরাই কেবল বরখাস্ত হয়েছেন সব বিভাগেই
এদিকে ত্রাণ চুরি ও অনিয়মের অভিযোগ ৯ জন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের ও ৩ জন বিএনপির। তবে লক্ষণীয়, সব বিভাগে ইউপি সদস্য বা ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরি বা অনিয়মের অভিযোগ না থাকলেও দেশের ৮ বিভাগেই সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা বরখাস্ত হয়েছেন।
এদিকে বরখাস্তের সংখ্যা যখন অর্ধশত পেরিয়ে যায় তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়। ত্রাণ চুরি ও অনিয়মের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলটি বরখাস্ত হওয়াদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে তদন্ত করে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংগ্রহ করা দলীয় ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বরখাস্তদের মধ্যে ১৯ জন আওয়ামী লীগের এবং ১২ জন বিএনপির ‘কট্টর’ সমর্থক। দলটির দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
ঢাকা বিভাগ
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে বরখাস্ত হওয়ার জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ১৭ জন আওয়ামী লীগ, ৫ জন বিএনপি সমর্থিত। অপর একজনের দলীয় পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে একজন জেলা পরিষদের সদস্য, একজন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৩ জন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ২ জন ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য।
এ বিভাগে বরাদ্দকৃত চাল কম দেওয়ার কারণে বরখাস্ত হওয়া কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মো. কামরুজ্জামান বর্তমানে দলের কোনও পদ পদবিতে নেই। তবে তিনি একসময় ঢাকার তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য সেকেন্দার মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের তালিকায়ও তাকে বিএনপির সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ত্রাণ চুরির অভিযোগে বরখাস্ত জেলার ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল মিয়া ইউনিয়ন যুবদলের ১৮নং কার্যকরী সদস্য। ত্রাণ চুরির মামলায় বর্তমানে গ্রেফতার আছেন তিনি।
সরকারি ত্রাণ বিতরণে বাধা ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা নবীন বর্তমানে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০০০ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
ত্রাণ চুরির অভিযোগে বরখাস্ত হন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য ও ওই ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিলকিস বেগম।
একই অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন কাপাসিয়ার রায়েদ ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ইউনিয়ন যুবলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন।
ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মণ্ডল। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে জয়ী জন। তিনি পাংশা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফরিদ হাসান ওদুদ মণ্ডলের আপন ছোট ভাই।
ত্রাণ ও চাল আত্মসাতের অভিযোগে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান ও একই ইউপি’র ৬ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বরত আছেন। তিনি ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন।
এছাড়া সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত গোপালপুর ইউপি’র ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ওবায়দুর রহমান, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাকিয়ার রহমান, ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ইব্রাহিম শেখ, ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রেজাউল করিম, ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. অলিয়ার রহমান এবং ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য স্বপ্না বেগম স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা রতন সখীপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মৎস্যজীবীদের ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মে বরখাস্ত হওয়া শরীয়তপুর জেলার গোঁসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউপি চেয়ারম্যান বিএম নাসির উদ্দীন স্বপন গোঁসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
একই অভিযোগে বরখাস্ত ওই ইউপির ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মোফাচ্ছের বেপারি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে একই অভিযোগে ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে বরখাস্ত ইউপি সদস্য শামীম আহমেদ বেপারি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সেলিম মোল্যা বিএনপি সমর্থক ছিলেন।
বর্তমানে জেল হাজতে থাকা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চর আড়ালিয়া ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য বাচ্চু মিয়া সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে থাকেন তিনি। অবশ্য আওয়ামী লীগের তথ্যমতে, তিনি কট্টর বিএনপি সমর্থক।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কবির হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে, বর্তমানে ভোল পাল্টে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। আওয়ামী লীগ তাকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
অপর দুই চেয়ারম্যান বরখাস্ত হয়েছেন ভিন্ন কারণে।
ময়মনসিংহ বিভাগ
ময়মনসিংহ বিভাগে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে তিন জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের সবাই সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিন জনই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তাদের মধ্যে একজন সংরক্ষিত আসনের।
এরমধ্যে সরকারের খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত আছেন। তবে দলে তার কোনও পদ নেই।
ত্রাণ বিতরণে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউপির সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য নাজনীন আক্তার লাভলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী।
অপর একজন ইউপি সদস্য বরখাস্ত হয়েছেন ভিন্ন কারণে।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রাম বিভাগে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ৯ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ৭ জন আওয়ামী লীগের ও দুই জন বিএনপির সমর্থক। এদের মধ্যে একজন পৌরসভার কাউন্সিলর, ৪ জন সরকারি দল থেকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ৩ জন ইউপি সদস্য ও ১ জন ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য।
তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত তিন জন দল বদল করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এদের দুজন আগে বিএনপির রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন আর একজন এসেছেন ইসলামী ঐক্যজোট থেকে।
ত্রাণ দেওয়ার পর ছবি তুলে তা কেড়ে নেওয়ার কারণে বরখাস্ত হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী এই চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। এর আগে তিনি ছাত্রলীগ করতেন।
ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগে বরখাস্ত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার নগদ অর্থ সহায়তার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়পুর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
একই অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবীর আহমেদ বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন এক সময়ে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
ওএমএস এর চাল বিতরণের তালিকা প্রণয়নে আত্মীয় স্বজনের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন বরখাস্ত হয়েছেন। আগে তিনি ইসলামি ঐক্যজোটের রাজনীতি করতেন । কাউন্সিলর হওয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার চর ইসলামপুর ইউপি থেকে ত্রাণে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য নিলুফা খাতুন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে, তার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিলুফাও দুই বছর আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তবে বিএনপিতে তিনি কোনও পদে ছিলেন না।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নগদ অর্থের সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য তাহের মিয়া। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনি বীরগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মান্নান মোল্লা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকারি চাল বিতরণ না করে বিক্রির উদ্দেশে ব্যবসায়ীর দোকানে মজুত করায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল হোসেন গ্রেফতার হন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে বরখাস্ত করে। ইকবাল হোসেন চরকিং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী বিভাগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ১২ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ৯ জন, বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ৩ জন। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থাকা ৯ জনের মধ্যে একজন অতীতে সর্বহারা দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ রয়েছে।
বরখাস্তদের মধ্যে একজন চারঘাট পৌরসভার কাউন্সিলর, ৪ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ৬ জন ইউপি সদস্য ও ১ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৩ জন আওয়ামী লীগের ও ১ জন বিএনপির। ইউপি চেয়ারম্যানদের একজন বিদেশে যাওয়ার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন।
ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া পাবনার ঢালারচর ইউপি সদস্য কোরবান আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার পর তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। কোরবান আলী পূর্বে নিষিদ্ধ সর্বহারা দলের সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।
দশ টাকা কেজি দরের চাল চুরির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য শাহিন শাহ ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাকে পরে সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকারি হটলাইন নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করে গ্রামবাসীর জন্য ত্রাণ চাওয়ায় নাটোরের লালপুরে একজন কৃষককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ব্যাপক মারধর করে ক্ষমতার দম্ভ দেখান অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার। এ ঘটনা কাউকে জানালে আবারও মারধরের হুমকি দেন তিনি। নির্যাতিত ব্যক্তি গ্রামে ফিরতেই গ্রামবাসী এ ঘটনা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। ইউএনও-র কারণ দর্শানোর নোটিশে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বরখাস্ত আব্দুস সাত্তার ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এদিকে, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মে বরখাস্ত হওয়া একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ রেজাও আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে তার কোনও দলীয় পদ নাই।
ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত সিরাজগঞ্জ রায়পুর উপজেলার পাঙ্গাসী ইউপির চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
জেলার চৌহালি উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউপি থেকে বরখাস্ত হওয়া সদস্য মো. রফিকুল ইসলামও সরকারি দলের সমর্থক।
ত্রাণে অনিয়মে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আল-আমিন চৌধুরী ও একই ইউপির সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য মোছা. আছিয়া খাতুনকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই দুইজনই বিএনপির সমর্থক ও দলটির সক্রিয় কর্মী।
রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভা ৬ নং ওয়ার্ড থেকে বহিষ্কৃত হওয়া কাউন্সিলর রাজু আহমেদ আওয়ামী লীগ ঘরনার। তবে তার দলীয় পদপদবি নেই। ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতার পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ককে পুঁজি করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন তিনি।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আকবর আলীর দলীয় কোনও পদ নেই। তবে স্থানীয়রা তাকে চেনেন ‘সবসময় সরকারি দলের লোক’ হিসেবে। বিএনপির সময় বিএনপির সমর্থক, আর আওয়ামী লীগের সময় আ.লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিতে দেখা গেছে তাকে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩৩০ কেজি চালসহ গ্রেফতার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তিনি সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ১৫ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ১১ জন, বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ১ জন, সরকারের সমর্থক ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতিতে জড়িত ১ জন এবং দলীয় পরিচয় ছাড়া ২ জন সদস্য রয়েছেন।
বরখাস্তদের মধ্যে ৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান। এদের ৫ জন আওয়ামী লীগের ও ১ জন বিএনপির। এছাড়াও আছেন ইউপি সদস্য ৮ জন এবং ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য ১ জন। বরখাস্ত ইউপি সদস্যদের মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগের, ১ জন ওয়ার্কার্স পার্টির, দুইজনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
আবার বরখাস্ত সদস্যদের মধ্যে একজন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আছেন যার পিতা আবার ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে বিএনপির সভাপতি।
ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারি বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কায় ভোট করেন।
জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু। বর্তমানে জেল হাজতে থাকা পল্টু কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।
একুশ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১নং আন্ধারমানিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম। রাজনৈতিক মতাবলম্বী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ ঘরানার, তবে কোনও পদ নেই। ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন।
ত্রাণ আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত ভোলা জেলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তিনি রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি।
ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্লাহ আলমগীর। আলমগীর মনপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
বরখাস্ত হওয়া মনপুর উপজেলার হাজিরহাট ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রব পাটোয়ারী হাজিরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এদিকে বরখাস্ত হওয়া জেলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ওমর ফারুক এবং ৫নং ওয়ার্ড সদস্য জুয়েল মিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সদস্য।
চরফ্যাশন উপজেলার আহমদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য কামাল হোসেন বেপারী কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন বলে জানা গেছে।
জেলেদের ভিজিএফের চাল মাপে কম দেওয়ার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রোকনুজ্জামান। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
একই অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেন এর কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা র তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঝালকাঠির জেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য রেজাউল করিম খান সোহাগ ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়মের বহিষ্কার হয়েছেন। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। অবশ্য তার পিতা হেমায়েত খান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
পটুয়াখালী জেলায় ত্রাণচুরির অভিযোগে তিনটি ভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে বরখাস্ত হয়েছেন তিন জন। এদের মধ্যে একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও বাকিরা সদস্য। আর দলীয়ভাবে দুজন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ও একজন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকা অবস্থায় দল থেকে বহিষ্কৃত।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন মোহন একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আর জেলার বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য লিপি বেগম কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের খালা শাশুড়ি।
এছাড়াও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন মৃধা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ধর্মছেলে পরিচয় দিয়ে ব্যাপক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এখন আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক তিক্ত বলে জানা গেছে।
খুলনা বিভাগ
বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ৭ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্র্রিয়ভাবে জড়িত ৪ জন, বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ২ জন, এবং সক্রিয় দলীয় পরিচয় নেই এমন রয়েছেন ১ জন।
বরখাস্তদের মধ্যে ২ জন সরকারি দলের প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বরখাস্ত সদস্যদের মধ্যে একজনের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হলেও তার পিতা থানা বিএনপির সভাপতি। বরখাস্তদের মধ্যে ইউপি সদস্য ৪ জন এবং ইউপির সংরক্ষিত সদস্য ১ জন।
ভিজিডির চাল আত্মসাতে বরখাস্ত হওয়া নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জারজিদ মোল্লা পিরোলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
একই অভিযোগে বরখাস্ত কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি জেলার নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
জয়নগর ইউপির সদস্য বরখাস্ত মোশররফ হোসেন নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
বরখাস্ত হওয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য রনি বেগম এর রাজনৈতিক পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার পিতা নড়াগাতি থানা বিএনপির সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান। আওয়ামী লীগের তালিকায় তাকে বিএনপি সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউপি সদস্য মো. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বিএনপির কোনও কমিটিতে নেই।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে বরখাস্ত হওয়া সদস্য মো. হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সমর্থক।
বরখাস্ত হওয়া কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম এর দলীয় পদ সম্পর্কে কেউ জানাতে পারেনি।
সিলেট বিভাগ
বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ৩ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ১ জন, আর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত বাকি ২ জন।
বরখাস্তদের মধ্যে ১ জন সরকারি দলের প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বাকি দুজনের একজন ইউপি সদস্য, অপরজন আরেক ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য।
এ বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মুখলিছ মিয়া করোনাকালে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।ত্রাণ বিতরণে অনিয়মে মামলা হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তালিকাভুক্তদের মাঝে বিতরণ না করে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি ওই ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য। তারা পারিবারিকভাবেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বরখাস্ত হওয়া ওই ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সাহিদা বেগম রুপাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদস্য।
রংপুর বিভাগ
এ বিভাগের ত্রাণ অনিয়মে এখন পর্যন্ত বরখাস্ত একমাত্র সদস্য হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কুলসুম বেগম। তিনি ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন কমিটির সদস্য।
ভিন্ন কারণে বরখাস্ত
এদিকে সরকারের অনুমতি না দিয়ে বিদেশ যাওয়ার কারণে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান উপজেলা প্রশাসনের কাছে ছুটির আবেদন জমা দিয়েই ইতালি গেছেন। তবে, ওই আদেশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে না পৌঁছানোর কারণে তিনি বরখাস্তের মুখোমুখি হন। তিনি বর্তমানে ইতালিতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আল শফি আনসারীও বরখাস্ত হয়েছেন করোনা সংকটের সময় ছুটি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ার কারণে। উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আনসারী আমেরিকায় করোনা আক্রান্ত স্ত্রীকে দেখতে যেতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন মঞ্জুর করেনি প্রশাসন। ফলে বিনা অনুমতিতে বিদেশ যাওয়ার জন্য তাকে সাসপেন্ড করা হয়। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় অবস্থান করছেন এবং স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মখদুম কবির তন্ময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত। করোনাকালে এলাকায় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বরখাস্ত হওয়া তন্ময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় জনসমাগম ঘটিয়ে ষাঁড়ের লড়াই আয়োজন করার কারণে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলাম বরখাস্ত হন।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়ীখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রুবেল ইজারাদার (বাবুল) করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের সময় চিকিৎসককে চিকিৎসাসেবা দিতে বাধা দেওয়ার কারণে বরখাস্ত হন। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে গ্রেফতার হন।
আওয়ামী লীগের তদন্তে বিএনপির যারা
আওয়ামী লীগের তথ্য সংগ্রহ অনুযায়ী বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দুই জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং বাকিরা ইউপির সদস্য। তারা হলেন- পটুয়াখালীর সদর উপজেলার কমলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনির রহমান মৃধা, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউপি চেয়ারম্যান মীর্জা গোলাম হাফিজ, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আল আমিন চৌধুরী, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউপির সংরক্ষিত সদস্য রনি বেগম, সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য কবির হোসেন, ঢাকার নবাবপুর উপজেলার নয়নশ্রী ইউপির ১নং ওয়ার্ড সদস্য মো. সেকান্দর মিয়া, নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার চরআড়ালিয়া ইউপির ৮নং ওয়ার্ড সদস্য বাচ্চু মিয়া, কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মো. হান্নান মোল্লা (প্রকৃত নাম মান্নান মোল্লা), মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কমলাপুর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মুজিবুর রহমান ও একই ইউপির সংরক্ষিত সদস্য সাহিদা বেগম রুপা।
বিএনপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল থেকে অবশ্য এমন কোনও তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কথা গণমাধ্যমে জানানো হয়নি।
সর্বশেষ:
সরকারি সহায়তা বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার আরও এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। রবিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর হলেন ১২ নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম নেহার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মাদ শামছুজ্জামান ৩১ মে রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম নেহার।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সরকারি সহায়তায় স্বজন ও স্বচ্ছল ১৬ ব্যক্তির নাম দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ধারা ৩১ (১) অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর ফলে ৩১ মে শেষে করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে বিভিন্ন অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৪ জনে।
Leave a Reply