বাবুগঞ্জ প্রতিবেদক ॥ অবিনাশী আগুনে পোড়ে শোকার্ত স্বদেশ, বাবার অশ্রু জমা হয় নিভৃত পাঁজরে, যে যাবে যুদ্ধে, সে উঠুক ঝলসে, যে যাবে যুদ্ধে সবকিছু ভাঙুক সে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত, ঘোষণার ধ্বনি- প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক, এই বাংলায় আনতেই হবে প্রিয় স্বাধীনতা।” এ মূলমন্ত্রকে বুকে ধারন করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল দক্ষিণ বাংলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্মভূমি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সূর্য সেনারা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বীর সেনানীরা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রচন্ড প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের অপকর্মে। ১৯৭১ সালের ৩রা জুন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বলেছিলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার মানব ইতিহাসের সর্বাধিক বিষাদময় ঘটনা।
মুক্ত বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী পালনের দ্বারপ্রান্তে, সেই ১৯৭১ সালের ৩রা জুন সূর্য সেনারা যেভাবে স্বাধীনতা বিরোধী দোসরদের দ্বারা নাজেহাল হয়েছিল ঠিক ৪৯ বছর পরে একই দিনে স্বাধীন দেশে আবার স্বাধীনতা বিরোধী দোসরদের সুযোগ্য উত্তরসূরীদের দ্বারা নাজেহাল হলেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত বসির উদ্দিন বয়াতির ছেলে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নির্বাচিত একাধিক বারের ওয়ার্ড সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন বয়াতী। স্বাধীনতা বিরোধী দোসরদের সুযোগ্য উত্তরসূরী, উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের মৃত সত্তার মৃধার ছেলে, জামায়াত নেতা ফারুক মৃধা ও বায়লাখালী গ্রামের আবদুল খলিল হাওলাদারের ছেলে, জামায়াত শিবিরের নেতা রাসেল হাওলাদারের হামলায় মহান ৭১’র বীর সেনানী জালাল উদ্দীন বয়াতির রক্তে রঞ্জিত হয় বাবুগঞ্জের রক্তস্নাত মাটি।
সরোজমিনে গিয়ে জানা যায়, জমি বিক্রির নাম করে প্রায় তিন বছর পূর্বে বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন বয়াতির নিকট থেকে সত্তর হাজার টাকা নেন ফারুক মৃধা। কিন্তু জমির কাগজপত্রের লুকোচুরি থাকায় তিনি আর জমি রেজিষ্ট্রেশন করে দিতে পারেন নাই ও টাকা ফেরত দেয়ার ওয়াধা করেন। কিন্তু দুই ডজনখানেকের উপর ওয়াধা বরখেলাপ করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বায়লাখালী পোষ্ট অফিস বাজারে বসে বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন বয়াতি পাওনা টাকা ফেরত চাইলে জামায়াত নেতা ফারুক মৃধা জানিয়ে দেন, আমি এখন টাকা দেব না, পরে দেব। এতে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে ফারুক ও রাসেল মিলে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলোপাতাড়ি মেরে রক্তাক্ত আহত করে। বায়লাখালীর পোষ্ট অফিস বাজারে টিন, এলপিজি গ্যাস, সার, মুদি মনোহরি পন্যের নিজ দোকান মুক্তিযোদ্ধা ভ্যারাইটিজ ট্রেডার্সে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন বয়াতি মূর্ছা যায়। দোকানে গিয়ে পূনরায় তারা হামলা চালিয়ে ক্যাশবাক্সে থাকা এক লক্ষ আটচল্লিশ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এঘটনায় স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হওয়া বীর সেনানী অভিমানে, কষ্টে চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযুক্ত ফারুক মৃধার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয় নাই।
Leave a Reply