হাফিজুর রহমান পান্না, রাজশাহী ব্যুরো ॥ রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ইঞ্জি এনামুল হকের বিরুদ্ধে গোপনে বিয়ে করে প্রতারণা ও ভ্রƒণ হত্যার অভিযোগ তোলায় আয়েশা আক্তার লিজার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে বাগমারা থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছে।
শুক্রবার (৫ জুন) বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, সাংসদের পক্ষে মামলাটি করেছেন তার একান্ত সহকারী ও বাগমারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ বিষয়ে সাংসদ এনামুল হক গণমাধ্যমকে জানান, লিজা ব্লাকমেইল করে তাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর চাঁদাবাজি করে সে ৫তলা বাড়ি করেছে।
মামলা প্রসঙ্গে আয়েশা আক্তার লিজা বলেন, আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তার অংশ হিসেবেই আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনগত আমি এখনো সাংসদ এনামুল হকের বৈধ স্ত্রী। আমাকে তালাকের প্রথম নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এখনো নোটিশ হাতে পাইনি। পরপর তিনটি নোটিশ তিন মাসে আসার পর তালাক চূড়ান্ত হয়।
চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে বলেন, সাংসদ এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি নাকি তাকে ব্লাকমেইল করে চাঁদাবাজি করে ৫তলা বাড়ি করেছি। এরই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, তাকে বিয়ে করার আগেই আমার ৩তলা বাড়ি ছিল। বিয়ের পর ব্যাংকে কোটি টাকার উপরে ঋণ নিয়েছি। এজন্যই এই অভিযোগ এনেছে। অথচ এমপি এনামুল নিজেই আমাকে মেসেজ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। সেই মেসেজ আমার কাছে এখনো আছে। আমিও তার নামে মামলা করবো।
এদিকে আয়েশা আক্তার লিজা সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের নামে প্রতারণা ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান দিল সেতারা চুনি বলেন, প্রতারণামূলক বিয়ে, বাচ্চা নষ্ট করা এবং রাজনৈতিক কারণে বিয়ে গোপন করতে বলে লিজার সাথে ঘর সংসার করেন এমপি এনামুল হক। পরে যখন সন্তান এবং স্বীকৃতি দাবি করেন, তখন লিজার স্বাক্ষর জাল করে একটি তালাকের কাগজ দেখান। এতে বলা হয় লিজাই তালাক দিয়েছেন। পরে বলা হয় এনামুল হক তালাক দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা নিজেরা দুজনই বিবাহিত ছিলেন। দুজনই বিয়ে করেছেন। এখন তাদের কাগজপত্র যাচাই করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাগজ পর্যালোচনা করছি।
বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর সাংসদ এনামুল হকের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ও চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেছেন তার একান্ত সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ। এতে আসামি করা হয়েছে এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজাকে।
মামলায় বলা হয়েছে, আয়েশা আক্তার লিজাকে তালাক দেওয়ার পর তিনি তার স্বামী সাংসদ এনামুল হকের কাছে নিজের ব্যাংক লোনের এক কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি দিয়ে সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তার সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন।পুলিশ লিজাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানান বাগমারা থানার ওসি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি লিজা আক্তার আয়েশা নিজেকে এখনো এমপি এনামুলের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
লিজা বলেছেন, আমি প্রকাশ্যে স্ত্রীর মর্যদা দাবী করার কারণে এমপি সাহেব বিষয়টা অস্বীকার করেছেন। ফলে আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফেসবুকে আমাদের ছবিসহ বেশকিছু প্রমাণ প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমপি এনামুল হকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণেই সাবেক স্বামী ডলারকে আমি তালাক দিয়েছি। এরপর এমপি সাহেবকে বিয়ে করেছি। ২০১৫ সালে আমি গর্ভবতী হলে এনামুল সাহেব তা নষ্ট করান। এরপর পারিবারিকভাবে ২০১৮ সালের ১১ মে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছে। লিজা অভিযোগ করে বলেন, এমপি এনামুল তার সাথে প্রতারণা করেছে। জীবন নষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে ইঞ্চিনিয়ার এনামুল হক বলেন, লিজা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য এসব করছে। প্রতারনা করে বিয়ে করেছে। শোনা যাচ্ছে এর আগে তার একাধিক বিয়ে হয়েছিল। চাঁদাবাজি করে নগরীতে আলীসান বাড়ি করেছে। এনজিও করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হবার জন্য আহবান জানান।
Leave a Reply