রাজশাহী ব্যুরো ॥ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রতিটি বিভাগে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস শুরু হয়।
রুয়েট শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকলেও মাঝে মধ্যে অনেকের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরছে। পাশাপাশি বৃষ্টির জন্যও রুটিন অনুযায়ী সময়মত ক্লাস নেয়া বিঘিœত হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে বসে না থেকে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সময়টা কাজে লাগানো যায়। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রথমদিন প্রায় সবাই ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছেন তারা। বসে না থেকে ক্লাস করতে আগ্রহী তারা। তবে থিউরি ক্লাস করা সম্ভব হলেও প্রাকটিক্যাল ক্লাস করা সম্ভব নয়।
রুয়েটের জনসংযোগ দপ্তরের জুনিয়র সেকশন অফিসার আফম মাহমুদুর রহমান দীপন বলেন, রুয়েটে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ও ট্রায়াল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগের অধিকর্তা, সভাপতিসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা অনলাইনে বিভিন্ন সময়ে মিটিং করেছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে পুরোদমে প্রত্যেকটি বিভাগে রুটিন অনুযায়ী অনলাইন ক্লাস চলছে। অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্বে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল।
রুয়েটের মানবিক বিভাগের প্রভাষক (ইংরেজি) আসহান হাবিব বলেন, প্রথমবারের মতো নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে অনেক ভালো লেগেছ। ক্লাস রুমের মতো তেমন গুছালো পরিবেশ না থাকার অপূর্ণতাটা বুঝতেই পারি নি খোলামেলা জায়গায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সংস্পর্শে এসে ক্লাস নিয়ে। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রায় শতভাগ উপস্থিত ছিলেন। যদিও বিষয়টা খারাপ লাগার, ছাত্র-শিক্ষক পাশাপাশি থেকে ক্লাস নেওয়ার মতো আনন্দটা পাওয়া যায় না এভাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারে বসে না থেকে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে কিছুটা হলেও সময়টাকে কাজে লাগানো যায়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ হবে।
তবে তিনি জানান, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময় ইন্টারনেটসেবা খুব ভালো একটা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ঘরে বসে সেজন্য ক্লাসই নিতে পারেনি। অনেক শিক্ষার্থীরও ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে। বর্তমানে বৃষ্টির দিনে বাইরে বসে সময়মত ক্লাস নেয়াটাও কিছুটা কষ্টসাধ্য। ক্লাসের সময় অনেকে মাঝে মাঝে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে আবার অনেকে ওয়াই-ফাই দিয়ে ক্লাস করলেও লোডশেডিং এর কারনে ক্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন।
ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী স্বপ্ন চন্দ বলেন, আমরা আজ অনলাইনে প্রথম ক্লাস করলাম। প্রথম ক্লাসেই আমাদের বেশিরভাগ সহপাঠীরাই অংশগ্রহন করেছে। আসলে আমরা এ পদ্ধতির সাথে অভ্যস্ত নই, কিছুদিন ক্লাস করলে আমাদের কাছে বিষয়টি খুব সহজ মনে হবে। আমার মনে হয় বসে থেকৈ সময় নষ্ট না করে আমরা যদি একটু কষ্ট করে ক্লাসগুলো এগিয়ে নিতে পারি তাহলে সেশন জটে পড়তে হবে না। আমাদের থিউরি ক্লাস হচ্ছে কিন্তু সেই থিউরি সম্পর্কিত প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলো করা হচ্ছে না। সেটা অনলাইনে সম্ভবও নয়। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। এজন্য আমরা অনলাইন ক্লাস নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন করতে গত মাসের ১৩ তারিখ থেকে আলোচনা শুরু করেছি। এ ধরণের ক্লাস করতে কত জন আগ্রহী সেটা জানার জন্য সার্ভেও করেছি। এতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাস করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মেধাবীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে পড়তে এসেছে। তাদের কাছে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আমরা পরিকল্পনা করেছি প্রয়োজনে তাদের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবো যাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে পারি।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরাও ভাল সারা দিয়েছে। প্রথম ক্লাস হিসেবে উপস্থিতি অনেক ছিল। এটা আরও বাড়বে।উপাচার্য আরও বলেন, অনেকে হয়তোবা ইন্টারনেটের ত্রুটির কারণে যথাসময় ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে না, তাই প্রতিদিনের ক্লাস রেকর্ড করে পোস্ট করা হবে। সেখানে কারও যদি প্রশ্ন থাকে সেটা প্রশ্ন করতে পারবে। সেই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমরা পরের দিন রিভিউ ক্লাস দেব। এছাড়া প্রাকটিক্যাল এবং পরীক্ষাগুলো পরিবেশ ভাল হলে বিশ্বিবদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। প্রযুক্তির যে নানা ধরনের ব্যবহার রয়েছে আমরা সেগুলো ব্যবহার করে দেখাতে চাই। আমাদের দেখে যেন অন্যরা উৎসাহিত হয়।
Leave a Reply