কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ বিশ্ব আতংকিত মহামারী করোনাকালীন ও উপকূলের জেলেপাড়ায় চলমান ৬৫দিনের অবোরোধ চলাকালীন সময় উপকূলে বিভিন্ন এনজিও আদায় করছে কিস্তির টাকা। মোবাইল ফোনে চাপ সৃষ্টি করাসহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে। সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছেন না। কেউ স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিলে তা নিচ্ছেন। উপকূলীয় এলাকায় কাজ করা একাধিক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ কারণে তারা কাউকে চাপ প্রয়োগ করেন না। যেহেতু তাদের অফিস খোলা সে কারণে কিস্তির টাকা গ্রহণ করছেন। সাঈদ ভাই এনজিও কিস্তি আদায় করছে। পদক্ষেপ বাড়িতে টাকা নিতে আসে। আমাদের তো কাজ কর্ম নাই। কি করে কিস্তি দিবো ? আপনি যদি এই ব্যাপারে একটু লেখেন খুব ভাল হয়। কথাগুলো ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখছেন মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের দিনমজুর জসিম খান। জসিম খানের মতো অনেকেই এনজিও কর্মীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনুরোধ করে লেখা পাঠাচ্ছেন। এ বিষয়ে একাধিক এনজিও কর্মীরা বলছেন, ‘আমরা তো পরের চাকুরী করি, হুকুমের গোলাম।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এনজিওগুলো যেখানে কিস্তির টাকা আদায় করছে সেখানে আমাদের মতো ছোট সংস্থা বসে থাকতে পারে না।
মিশ্রিপাড়া গ্রামের হনুফা বেগম জানান, তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি দিতে চাননি বলে তার সাথে ভাল ব্যবহার করেননি এনজিওর মাঠ কর্মী। মহিপুর থানার আলীপুরের ফাতেমা বেগম জানান, তিনি উদ্দীপনসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে বাসায় এসে মাঠকর্মী বলে গেছেন আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা দিতে হবে। আলীপুরের সাইদুল ইসলাম, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না বলে ঘোষণা দিলেও এনজিও তা মানছে না কেন?
কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, কোডেক, কারিতাস, বুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন, পদক্ষেপ, সংগ্রাম’র মতো বড় বড় এনজিওর পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসকল এনজিওগুলো প্রতি জনপ্রতিনিধি, সচেতনমহল ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে চলমান করোনাকালীন সময়ে এ অঞ্চলের এনজিওগুলো কোন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হয়নি। এই প্রান্তিক জনপদের গরিব দুঃখি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এনজিওগুলোর তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়ে নি।
অবশ্য বেসরকারী এনজিও সংস্থা এসোসিয়েশন অফ ভলান্টারী এ্যাকশন সোসাইটি (আভাস)‘র উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ্য প্রত্যেককে নগত ৩ হাজার টাকাসহ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক উপকারণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এনজিওগুলো শুধুমাত্র উপকূলীয় জনপদের জেলেপাড়াসহ অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে জিম্মি করে ব্যবসা করছে। বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসকালীন সময়ে (কোবিট-১৯) কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা না করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ.এম মিজানুর রহমান বুলেট বলেন, এই প্রান্তিক জনপদে সাধারণ মানুষের দারিদ্রতাকে পুঁজি করে এনজিওগুলো ব্যবসা করবে অথচ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে না, আবার দূর্যোগকালীন সময় কিস্তির টাকা আদায় করবে তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য। তার ওপর এনজিওর কিস্তি পরিশোধের তাগাদায় দিশাহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাদের বাধ্য না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না তারা। সূত্র জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় অর্ধশত এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এনজিওকর্মীরা প্রতিদিন ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিস্তি পরিশোধে তাগাদা দিচ্ছে। কিস্তি আদায়ে মানসিক চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এক এনজিওকর্মী জানান, অফিসের নির্দেশনা মেনে তাদের কাজ করতে হয়। এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আপাতত কিস্তির টাকা আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোন এনজিও কারো নিকট থেকে জোর করে কিস্তির টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ অভিযোগ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
Leave a Reply