নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কীর্তনখোলা নদীর করাল গ্রাসে প্রতিনিয়ত মানচিত্র হারাচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে ইউনিয়নের চুড়ামন গ্রাম। এই গ্রামটি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে পড়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে বহু ঘর-বাড়ি, বাজার। এখন হুমকির মুখে উত্তর রামকাঠি বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ, স্ব-মিলসহ বেশকিছু ঘরবাড়ি। যার কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে চুড়ামন গ্রামসহ শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নবাসী। বরিশাল ৫ আসন (সদর) এর এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম জানিয়েছেন, সারাদেশেই ভাঙন চলছে। যে যার এলাকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে। সম্ভবত ওই স্থানের জন্য প্রকল্প করা হয়েছে। শুধু প্রকল্প করলেই হয় না। তা পাস করানোসহ বিভিন্ন কাজে সময় লাগে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্পট ভিজিট করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চুড়ামন গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী কাওছার মৃধা বলেন, গত এক মাস ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় ৬ মাস শান্তিতে ছিলাম। কিন্তু ফের কীতর্নখোলার ভয়াবহ রুপ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, আরো এক সপ্তাহ এভাবে ভাঙন হলে অনেকের ঘর-বাড়ি রক্ষা করা যাবে না। তাই খুব দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। জরুরী ভিত্তিতে অরক্ষিত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল অর্জন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। কাওছার মৃধা আরো বলেন, তাদের বাড়ির ২০-৩০টি ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকীতে থাকার উত্তর রামকাঠি বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের সভাপতি মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, মসজিমের সামনে থেকে রতন খাঁর বাড়ি পর্যন্ত ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক বছরে এখানোর বহু ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এখন একটি স্ব-মিলও বিলিনের পথে। সম্প্রতি ১ কোটি টাকার বালু ফেলার কাজও আসে এখানে। কিন্তু সব ব্যাগ না ফেলার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এখানে পানি সম্পদ মন্ত্রী এসেও দেখে গেছেন। খুব দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে চুড়ামন গ্রামই আর থাকবে না। শুধু চুড়ামনই নয় এই ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।
শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে আমার নিজের বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে। বিলিন হয়ে পাড়ে কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও।’ তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড যত কাজ করে তার বর্ষাকালে। কি কারণে এই সময় তারা বেছে নেয় বুঝতে পারছি না।’ মুন্নার বলেন, ‘বরিশাল সদর আসনের এমপি (পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম) যখন নির্বাচন করে তখন আমাদের একটি দাবী ছিল। সেটা হচ্ছে কামারপাড়া থেকে রামকাঠি পর্যন্ত ভাঙণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কিন্তু বালু বস্তা ফেলা ছাড়া কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি। মন্ত্রী একটু সুদৃস্টি দিলে আমরা এই সমস্য কাটিয়ে উঠতে পারি।’ বরিশাল সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. মাহবুবুর রহমান মধু বলেন, চুড়ামনের মাথা থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত পানি সম্পদ মন্ত্রী ভিজিট করেছেন। এরপর সেখানে কিছু কাজ করা হয়েছে। কিন্তু মাঝখানে মৃধা বাড়ি এলাকায় কাজ হয়নি। সেখানে ভাঙনের বিষয়টি বেশী লক্ষ করা যাচ্ছে। খুব শিঘ্রই মন্ত্রী স্পট ভিজিট করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান।
বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, চুড়ামনে ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে আগে থেকেই জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এখন আবার ফেলা হবে। পরে ব্লকও ফেলা হবে। প্রকল্প দেয়া হয়েছে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সেখানের ভাঙনের অবস্থা বেশি খারাপ হলে প্রজেক্ট করে কাজ করা হচ্ছে। পাস হলে ও কার্যক্রম শুরু করতে যতটুক সময় লাগে। এরপর সব সমস্যা দুর হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে।
Leave a Reply