নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এবারের বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে’। তিনি নিশ্চিত করেন, করোনা সংকট রুখতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ থাকবে এবারের বাজেটে। করোনাকালীন বিপর্যয় মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রায় এবারের বাজেট কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে মতামত দিয়েছেন বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এবারের বাজেটকে ঘিরে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখলেও এমন বাজেটকে সময়োপযোগী মনে করছেন না অনেকে। যদিও দণিাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ দেবার কথা উঠেছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে কিন্তু করোনাকালীন সময়ে বরিশালের স্বাস্থ্যখাতকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরীর কাছে এবারের বাজেট বরিশালবাসীর জন্য পরম সম্ভাবনার। তিনি জানান, দণিাঞ্চলের জন্য বেশক’টি উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে। যা এই অঞ্চলের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কথা ভাবেন, দেশের মানুষের কথা ভাবেন। তাঁর মতার আমলেই দণিাঞ্চলের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে যা অন্য কোন সরকার করতে পারে নি। এবারের বাজেটে এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হবে বলে আশা করছি। তবে এবারের বাজেটকে একদমই সময়োপযোগী মনে করছেন না বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার।
তিনি বলেন, পুরো বরিশালে মাত্র একটি করোনা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র। যেখান থেকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে না। করোনা মহামারি রুখতে যে ধরনের সম বাজেট প্রণয়নের আশা করেছিলাম তা পূরণ হয় নি। তিনি আরো জানান, সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির ল্যমাত্রা যেটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা পূরণে দেশের মানুষের জীবনের চেয়ে জীবিকাকে প্রধান্য দিয়েছে সরকার। এই বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য কোনরূপ উপকারী হয়ে উঠতে পারবে না। ইতোমধ্যে মোবাইল-ইন্টারনেটসহ যাবতীয় দৈনন্দিন খরচ বৃদ্ধিকে তিনি এই অকল্যাণকর বাজেটের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সর্বশেষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া ইকবাল হোসেন তাপস এবারের বাজেট দেখে হতাশ হয়েছেন।
তিনি জানালেন, ভেবেছিলাম করোনাকালীন সময়ে জাতীয় বাজেটেই স্বাস্থ্যখাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। যার প্রভাব পড়বে বরিশালের স্বাস্থ্যখাতে। কিন্তু করোনা সংকট রুখতে আলাদা করে কিছু চোখে পড়ে নি এবারের বাজেটে। এছাড়া তিনি স্বীকার করেন, দণিাঞ্চলের উন্নয়নে বর্তমান সরকার কিছু দৃশ্যমান কাজ করেছে। কিন্তু এবারের বাজেটে এই অঞ্চলের সম্ভাবনাময় খাত রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় খুব বেশি উদ্যোগ নেয়া হয় নি দেখে তাঁর হতাশা আরো বেড়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট পুনঃমূল্যায়ন করে শিা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ আরো কিছু দাবি নিয়ে বরিশালের রাস্তায় নেমেছিল ছাত্র মৈত্রী। এই ছাত্র সংগঠনের মূল দল ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা সম্পাদক টিপু সুলতান দীর্ঘদিন যাবত জেলা পর্যায়ে আলাদা বাজেট ঘোষণার কথা বলে আসছেন।
তিনি জানান, রংপুরে একটি রাস্তা তৈরি করতে যে টাকা খরচ হবে বরিশালে সেই রাস্তার খরচ এক হবে না। তাই শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়ে একটি বাজেট ঘোষণা করা অগ্রহণযোগ্য ও অবাস্তবিক। করোনাকালীন এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, শিা ও কৃষিখাতে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন, এবারের গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক বাজেটে অন্তঃসারশূন্য স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যে কারণে করোনা মহামারি রুখতে আমরা কতটা সফল হবো তা নিয়ে শংকায় আছি।
Leave a Reply