নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে শিশুসহ ৫ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মাত্র ১১ ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক সময়ে তাদের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া এক চিকিৎসক উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও পরবর্তীদে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের অস্থিত্ব পাওয়া যায়। বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ বাকির হোসেন। এনিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৭০ রোগী আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে প্রাণ হারালেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- রোববার দুপুর দেড়টার দিকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৩ বছর বয়সী শিশু আল মামুন। বরগুনার পাথরঘাটার বহরপুর গ্রামের মো. বারেকের ছেলে ওই শিশুকে ২০ জুন রাত ৩টায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। করোনার উপসর্গ প্রকাশ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ বিয়োগান্তের কিছুক্ষণ পরে দুপুর আড়াইটায় করোনায় আক্রান্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধ লুৎফর রহমান একই ওয়ার্ডে মারা যান। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাদপাশা এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে লুৎফর গত ২ জুন দুপুরে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। এরআগে সকাল সোয়া ৯টায় করোনা ওয়ার্ডে মারা যান ৪০ বছর বয়সী গৃহবধূ শিউলী বেগম। ঝালকাঠির গুয়াটন এলাকার ইকবাল হোসেনের স্ত্রী শিউলী ২০ জুন রাত সাড়ে ১২টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়- ওই রাতে একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান করোনায় আক্রান্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. জয়নাল। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মৃত আফসার আলীর ছেলে জয়নাল গত ১৮ জুন রাত ৯টায় করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করে স্বজনেরা। শনিবার রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এই প্রাণবিয়োগের কিছুক্ষণ আগে করোনা আক্রান্ত ৫০ বছর বয়সী আইউব আলীর মৃত্যু ঘটে। ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া এলাকার মৃত আমজেদ আলীর ছেলে আইউবকে ১৮ জুন করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল।
এছাড়া জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এমদাদ উল্লাহ খান করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষার প্রাপ্ত রিপোর্টে তার শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন রোববার সকালে বিষয়টি বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেন। মারা যাওয়া ওই চিকিৎসক জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন) পদে কর্মরত ছিলেন।
গত শুক্রবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এমদাদ উল্লাহ খানের মৃত্যু ঘটে। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলা শহরে হলেও কর্ম সুবাদে তিনি বরিশাল থাকতেন। শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়- করোনার উপসর্গ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন চিকিৎসক এমদাদ উল্লাহ। শুক্রবার সকালে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করলে ওই দিন বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক এমদাদ উল্লাহ খান শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ বাকির হোসেন জানান, ২৯ মার্চ থেকে ২১ জুন রোববার পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে ৭০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন।’
Leave a Reply