বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, ‘সরকারের লোকজন, বিএমএ বলছে-করোনায় মৃত্যুর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ দুঃসময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি কোনো কোভিড হাসপাতাল ভিজিট করেছেন? ১০ দিন ধরে ফোন করে ও বার্তা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাড়া মিলছে না। ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেন। কমিটমেন্ট আছে, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেন।’ গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর পর তিনি ওয়াকআউট করেন।
বেলা ১টার দিকে হারুন-অর রশীদকে ১২ মিনিট আলোচনার সুযোগ দেন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। শুরুতেই সময় আরও বাড়িয়ে দেওয়ার আরজি জানান সাংসদ। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন হারুন-অর রশীদ। তখন স্পিকার তাকে থামিয়ে এভাবে শুরু করার কারণ জানতে চান। ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘এমনভাবে শুরু আমার সাতবারের সংসদ সদস্য জীবনে দেখিনি। আপনাকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।’ তখন হারুন-অর-রশিদ জানান, এটা বলার কারণ আছে। বক্তব্যের শেষের দিকে তিনি এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
হারুন-অর-রশীদ অভিযোগ করেন, সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। চাঁদাবাজি, শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ খারাপ ব্যক্তিরা দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেনÑ দুর্নীতির বিরুদ্ধে
জিরো টলারেন্স। অথচ এ সংসদে এমন ব্যক্তি এসেছেন, যিনি মানবপাচারের শীর্ষে। তিনি কীভাবে সংসদে এলেন? তার স্ত্রী কীভাবে সংসদে এলেন? সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে সংসদে আসতে পারতেন না।’ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ নসিহত দিচ্ছেন। সৎ হতে হবে। ১০ বছর ধরে শীর্ষ পদে আছেন তিনি। গত নির্বাচনে যারা মানুষের আমানত নষ্ট করেছেন, এর জবাবদিহি করতে হবে না? এই পুলিশ দিয়ে সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশ আওয়ামী লীগের গোলাম ও দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে বিএনপির সাংসদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেনÑ করোনা দু-তিন বছরেও যাবে না। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিজি। তা হলে এই করোনা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটাকে মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। আর জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে।’ তবে এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারদলীয় সাংসদেরা হইচই শুরু করেন। এ সময় হারুন বলেন, ‘হইচই করে লাভ নেই। চিল্লাচিল্লি করে কোনো লাভ হবে না। জনগণের কাছে বার্তা যাচ্ছে যে, আপনারা সত্য তথ্যগুলো তুলে ধরা থেকে বঞ্চিত করছেন।’ এ পর্যায়ে হারুন-অর রশীদের সময় শেষ হয়ে গেলে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। হারুন-অর রশীদ মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন। এ সময় অন্য সদস্যরা হইচই করতে থাকেন।
তখন সাংসদ হারুনকে উদ্দেশ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন, এটি সুন্দর প্রস্তাব। কিন্তু আপনি এমন দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যাদের কথা আমি সংসদের এই চেয়ারে বসে উচ্চারণ করতে চাই না। একটি নির্বাচিত সরকার কোনো কনভিক্টেড ব্যক্তির সঙ্গে ঐক্য করতে পারে না।’ বিএনপির এই সাংসদ ‘কিছু অসংসদীয় কথা’ তার বক্তব্যে বলেছেন উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার তা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পরামর্শে তিনি বাজেটের ওপর আরও এক মিনিট বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন হারুনকে। এ সময় হারুন ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আপনি সময় বাড়িয়ে দেননি। মাননীয় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলার পর আপনি এক মিনিট সময় বাড়িয়েছেন। আমি আর বক্তব্য দেব না। আপনি আমার বক্তব্যে ইন্টারাপ্ট করেছেন। এর প্রতিবাদে আমি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করছি।’ এই বলে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন হারুন। এ সময় ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘হারুন-অর-রশীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমি যথেষ্ট। আমি আনপার্লামেন্টারি কিছু হতে দেব না। এটা সরকারি দলের সাংসদ হলেও আমি ইন্টারেপ্ট করব।’
এদিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশীদ সংসদ অধিবেশনে ‘মুজিব কোট’ পরে যোগ দেন। যদিও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাংসদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি মুজিব কোট নয়, ব্লু রঙের কটি পরেছি।’ আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘আমি মুজিব কোট পরতে যাব কেন? সংসদে না এসে গণমাধ্যমে আমার পোশাক নিয়ে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি ব্লু রঙের কটি পরেছি। পাঞ্জাবির সঙ্গে এ পোশাক সবাই পরে থাকেন। এটা নতুন কিছু নয়। আর মুজিব কোট হয় কালো রঙের।’
হারুন বলেন, ‘মুজিব কোট তো যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা পরেন। আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গঠিত বিএনপি করি, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে হেয় করার জন্য গণমাধ্যমে এ সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক।’ সংসদে পোশাক-আশাক নিয়ে কথা না বলে ‘বক্তব্য’ সম্বন্ধে আলোচনা হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Leave a Reply