নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে ভবন নির্মাণ। এতে করে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোন রকম মাথা ব্যথা নেই প্রভাবশালী ভবন মালিকদের। ঝুঁকির বিষয়টি জেনেও তারা যৌথ ভাবে ক্রয়কৃত এই জমিতে নির্মাণ শ্রমিকদের জোর করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবনটির মালিক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরিরত সুব্রত বাহাদুর, সিটি কলেজের লেকচারার প্রশান্ত কুমার, পূবালী ব্যংকের অফিসার অলোক কুমার, রূপালী ব্যাংক অফিসার বাপ্পিসহ আরও ১০ জন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদান করে প্রভাব খাটিয়ে বাড়ির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দুর্ঘটনা রোধে তারা দ্রুত এই ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ এবং দোষি ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর মল্লিক রোড এলাকার উদীচী গলির মধ্যে মুখার্জি কুটির নামের একটি বাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৬ তলা ভবন। ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে বৈদ্যুতিক খুটি ও তার ভবনের মধ্যে রেখেই। ছাদের ঢালাই বিদ্যুতের খুটির সাথেই দেওয়া হয়েছে। ভবন মালিক অলক কুমার জানিয়েছেন, ছাদের সাথে বিদ্যুতের খুটি ঢালাই করে আটকে দেওয়া হয়েছে যেন ভবিষ্যতে খুটিটি ভেঙ্গে পড়তে না পারে। দেখা গেছে, ভবনের মধ্য থেকেই ১১ হাজার ভোল্টোর বৈদ্যুতিক তার রাখা হয়েছে।
কর্মরত নির্মাণ শ্রমকিরা জানিয়েছেন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করছি। বলা যায় বিদ্যুতের তারের ওপর দাড়িয়ে কাজ করতে হয়। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শ্রমিকদের দাবি, করেনার মধ্যে কাজ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানে কাজ করছেন। আর কাজ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারে (সুব্রত বাহাদুর) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। স্থানীয় আরও জানান, ভবন নির্মাণ শুরুর সময় তাদেরকে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে ভবন নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়। তবে তারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কারো পরামর্শকে তোয়াক্কা করেনি। তারা গায়ের জোরে একটি চক্রের সহযোগীতায় পুরো এলাকার মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন। তাড়াছা তারা ভবন নির্মাণে নির্ধারিত প্লান মানেননি বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
ভবনের অংশিদার পূবালী ব্যংকের অফিসার অলোক কুমার জানান, আমরাই শুধু নয় বিদ্যুতের খুটি পাশে রেখে উত্তর পাশের বাড়িওয়ালাও দেয়াল তুলেছে। তাছাড়া আমরা সিটি কর্পোরেশনকে খুটি সরানোর জন্য বলেছি। তারা তা করেননি। খুটি না সরালেতো কাজ বন্ধ রাখা যায় না। তাই আমাদের কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। আরেক অংশিদার বরিশাল সিটি কলেজের রসায়নের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার জানান, কলেজের বেতনের টাকায়তো এত বড় ফ্লাট তৈরী করা সম্ভব না। ঋণ নিয়ে ১০জনে ১০টি ফ্লাট করছি। ফ্লাট প্রতি কমপক্ষে ৩৫ লাখ টাকার বেশি লাগবে বলে দাবি করেন এই শিক্ষক। কলেজের শিক্ষকের অবসরে যাওয়ার আগে ৩৫ লাখ টাকা জমানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমাদের নিকট অভিযোগ প্রদান করা হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বহী প্রকৌশলী অমল্য কুমার সরকার বলেন, যে কোন ভবন বিদ্যুতের খুটির থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে নির্মাণ করতে হবে। বিদ্যুতের খুটি না সরিয়ে ভবন নির্মাণ বেআইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply