তজুমদ্দিন প্রতিবেদক ॥ ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনায় ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও চলছে ইলিশের আকাল। মৌসুমের আড়াই থেকে তিন মাস শেষ হয়ে গেলেও ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে জেলেরা। যে কারণে এনজিও’র ঋণের টাকা আর মহাজনের দাদনের টাকা দিতে না পারায় অনেকে পালিয়ে বেড়ায়। আবার কেউ কেউ ছেড়ে দিচ্ছেন পুরনো এই পেশা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার জেলে। বছরের এপ্রিল মাস থেকে পূরোদমে ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ায় অনেক জেলে মহাজনের দাদন ও এনজিওর কাছে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা এবং জাল কিনে নদী ইলিশ মাছ ধরার পূর্ণ প্রস্তুতি নদীতে নামে। কিন্তু জেলেরা দলবেঁধে মাছ ধরতে নদীতে গিয়ে দিন-রাত জাল ফেলে মাত্র ৩ থেকে ৪টি ইলিশ নিয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয়। এই মাছ বিক্রি করে এনজিওর ঋণ ও মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধতো দূরের কথা নদীতে যেতে ইঞ্জিনের জন্য ক্রয় করা ডিজেলের দামও হয় না। যে কারণে দোকান থেকে চাল, ডাল, মরিচ ও তেল কিনে টাকা দিতে না পারায় দোকানদারও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামল দিচ্ছে না।
শশীগঞ্জ স্লুইজঘাট এলাকার জেলে দেলোয়ার হোসেন (৭০) বলেন, নদীতে মাছ নাই। দিন-রাত জাল ফেলে ৫-১০ টা মাছ পাই তা বিক্রি করে যে টাকা হয় তাতে ডিজেলের দাম হয় না। তারপরও পোলাপাইন নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলে আর এবারে ঈদতো আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে চিন্তা ততই বাড়ছে কারণ নদীতে মাছ না থাকায় পোলাপাইন ও পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছিনা এটা অনেক কষ্টের। মৎস্য আড়ৎদার নুরুল ইসলাম বলেন, দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকার বাজার নিয়ে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যায়। রাত দিন জাল ফেলে মাছ পায় তিন থেকে চারটি তা বিক্রি করে যে টাকা পায় তাতে দোকানের মালামালের টাকা দিলে আর জেলেদের তেমন একটা টাকা থাকে না। যে কারণে জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। শশীগঞ্জ ঘাটের মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম মহাজন বলেন, আমরা জেলেদেরকে দাদন দিয়েছি যেমনি তেমনি আবার আমরাও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। নদীতে মাছ না থাকায় জেলেরা দাদনের টাকা দিতে না পারায় আমরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছিনা খুব চাপে রয়েছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মু. মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে প্রচুর মাছ ধরার পরলেও এ বছর অফ সিজনে প্রচুর মাছ ধরা পরছিল। তাই মৌসুমের শুরুতে নদীতে মাছ না থাকার কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন, প্রচুর লবন ও বৃষ্টির মৌসুম পরিবর্তন হওয়ার ফলে মাছ পড়ার মৌসুম হওয়া সত্তেও জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছেনা। মাছ বংশ বিস্তারের (মাইগ্রেশন) জন্য নদীতে অনুকুল বৈশিষ্ট্য না পাওয়ায় সাগর থেকে নদীর দিকে আসছে না তাই ইলিশ মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলেও জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা পরছে না।
Leave a Reply