একদিকে করোনা। অন্যদিকে আষাঢ়ে বৃষ্টি। সাধারণত এ সময় শিশুর সর্দি-কাশিজনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আপনার ঘরে যদি শিশু থেকে থাকে, নিশ্চয় ইতোমধ্যে টেরও পাচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন, করোনা হলো কিনা! বিষয়টি অমন করে না ভেবে একটু ধৈর্য ধরে বোঝার চেষ্টা করুন। সাধারণ ফ্লু উড়িয়ে দেবেন কেন? যা-ই হোক, শ্বাসতন্ত্র থেকে শ্লেষ্মা, অস্বস্তিকর পদার্থ এবং সংক্রামক জীবাণু বের করে দিয়ে কাশি প্রকৃতপক্ষে শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। ফলে শ্বাসতন্ত্রে শ্লেষ্মা এবং অন্যান্য তরল জমতে পারে না। শ্বাসতন্ত্রের যত উপসর্গের জন্য আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকি, সেগুলোর মধ্যে কাশির অবস্থান একেবারেই ওপরে অর্থাৎ এক নম্বর।
কাশি হওয়া মানেই যে সন্তান অসুস্থ- এমন ভাবনা মনে নিয়ে আসাও উচিত নয়। স্বাভাবিক শিশুরাও দিনে এক থেকে ৩৪ বার কাশতে পারে এবং এ কাশির পালা চলতে পারে দুসপ্তাহ পর্যন্ত। তবে রাতে ঘুমের মধ্যে কাশি হলে তা সব সময়ই অস্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া খুব দরকার। শিশু এবং বড়দের কাশি ও চিকিৎসার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য আছে, রয়েছে কিছু বৈসাদৃশ্যও। শিশুদের কাশি দুধরনের হতে পারে। একিউট কাশি (মেয়াদ এক থেকে দুসপ্তাহ) এবং ক্রনিক কাশি (মেয়াদ চার সপ্তাহের বেশি)।
চিকিৎসা : ভাইরাসজনিত কাশির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এক বা দুসপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। দীর্ঘস্থায়ী কাশির ক্ষেত্রে প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কাশির অন্তর্নিহিত কারণ। অ্যাজমা, রাইনাটিস, সাইনোসাইটিস, অন্ত্রের সমস্যা- এগুলোর যে কোনোটি কাশির কারণ হতে পারে। গুয়াইফেনেসিন জাতীয় কফ সিরাপ প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না। ডেক্সট্রোমেথরফেন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। যেসব সিরাপের মধ্যে কোডেইন থাকে, সেগুলো বেশি কার্যকর। তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি। তাই বেশিদিন ধরে এ ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
সেক্ষেত্রে টেলিচিকিৎসাসেবা বা পারিবারিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। মূলকথা হচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী কাশির মূল কারণ খুঁজে বের করে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। যদি কাশির ধরন পরিবর্তিত হতে থাকে, যদি উপসর্গকারী ওষুধে কোনো ফল না হয়, যদি কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে থাকে অথবা কাশির কারণে রাতে ঘুম ও দিনে কাজের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অ্যাজমা-অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে তখনই, যদি তিন থেকে চার সপ্তাহ বা তার অধিক সময় কাশি থাকে। কাশির সঙ্গে যদি হাঁপানির টান থাকে। দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে যদি নাক ও সাইনাসের রোগ থাকে। দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে ধূমপান বা অন্য উত্তেজক পদার্থের সংযোগ যদি থাকে। শিশুর রোগের ক্ষেত্রে অবহেলা নয়। উল্লিখিত লক্ষণগুলো আপনার সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। নইলে বিপদ হতে পারে।
Leave a Reply