নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনায় সবচেয়ে বেশি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের স্বল্প ও নি¤œ আয়ের মানুষজন। প্রাদুুর্ভাব রুখতে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া সেলুনে চুল কাটাসহ অন্যান্য কাজে যায় না। যে কারণে স্বল্প আয়ের নরসুন্দররা পড়েছেন নানামুখী বিপাকে। সমস্যায় জর্জরিত হলেও বরিশালের নরসুন্দররা সরকারি প্রশাসন কিংবা জসপ্রতিনিধিদের দুয়ারে গিয়ে ফিরে এসেছে খালি হাতে। যে কারণে বাধ্য হয়ে মানবেতর জীবন যাপনের সম্মুখীন হচ্ছে জেলার হাজার খানেক নরসুন্দর পরিবার। বরিশাল মহানগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকার সেলুন মালিক সুমন চন্দ্র শীল। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে দোকানে তিনিসহ আরো তিনজন নরসুন্দর কাজ করতেন। বর্তমানে আয় কমে যাওয়ায় একজন বাধ্য হয়ে গ্রামে চাষাবাদের কাজ করতে চলে গিয়েছেন। শুক্রবার সকালে গিয়ে তাঁর দোকানের অন্য কর্মচারীসহ তাকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ছুটির দিন হলেও কাস্টমার নেই! আর এমন চিত্র তাকে গত কয়েকমাস যাবত নিয়মিত দেখতে হচ্ছে। যা তাঁর বিগত ১৭ বছরের কর্মজীবনে আগে কখনো অবলোকন করতে হয় নি। সুমন জানান, আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কাজের চাপ এত বেশি থাকতো যে দম ফেলার ফুরসত পাওয়া যেতো না। এখন সারা মাসে হাতেগোনা কয়েকজন কাস্টমার পাওয়া যায়। অন্যদিকে তাদের কর্মঘণ্টাও কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করলেও এখন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিকাল ৪ টার আগেই দোকান বন্ধ করি।
বরিশাল জেলা নরসুন্দর কল্যাণ ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন রায় জানান, বর্তমানে দোকান চালাতে অতিরিক্ত সাবান, জীবাণুনাশক তরল (স্যাভলন, ডেটল প্রভৃতি), নানা ধরনের করোনা জীবাণু প্রতিরোধক সামগ্রী ইত্যাদি কিনতে হয়। তারপরও কাস্টমার সচরাচর আসে না। আগের চেয়ে আয় কমে গেলেও দোকান ভাড়া বা অন্যান্য খরচ আগের মতোই নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বরিশাল জেলায় তাদের ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। গত ঈদের আগে এদের মধ্যে মাত্র একশো জনের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, ১ কেজি ডাল ও ১ টি সাবান দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব দরকার ছাড়া আমাদের কাছে কাস্টমার আসে না। তাই পরিবার নিয়ে প্রচ- অর্থ সংকটে পড়ে গেছি। সরকারের উচিত আমাদের নিয়ে ভাবা। জেলার নরসুন্দরদের এই সংগঠনটির সভাপতি নির্মল খাশকেল। তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ বরিশাল জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করার পর থেকে প্রায় দুই মাস তাদের সবার দোকান বন্ধ রাখতে হয়। দোকান বন্ধ থাকলেও মওকুফ হয় নি দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ। পেটের দায় মেটাতে সঞ্চয় কিংবা ধার-কর্য সবকিছুই শেষ হয়েছে এতদিনে। এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে বরিশালের সাংসদ, মেয়র এবং জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তর বরাবর। কিন্তু কোন জায়গা থেকে তাদের আবেদনের কোন উত্তর আসে নি।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের বাইরেও কয়েকশো নরসুন্দর বরিশালে কাজ করেন। সবারই বর্তমান পরিস্থিতিতে উপার্জনে ভাটা পড়েছে। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যসহ নিজেদের পেটের ক্ষুধা তো আর মিটে যায় নি। তাই মানসিক চাপে হয়তো অনেককে পেশা বদল কিংবা অবৈধ পথে উপার্জনের বন্দোবস্ত করতে হবে। আর যারা এই দুটোর একটাও করতে পারবেন না তাদের গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
Leave a Reply