দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছে গত শনিবার পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে জুন মাসে। করোনায় মৃতের ৫৯ দশমিক ৭০ শতাংশ ঘটেছে গত জুনে। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৭ জন রয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ৫০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, দেশে প্রথম করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওই দিন থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১১৯ দিনে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৯৯৭ জন। করোনায় সবচেয়ে বেশি রোগী জুন মাসে মারা গেছে, এক হাজার ১৯২ জন। দেশে করোনায় মৃতের হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
তবে এই মৃত্যুহার মার্চ মাসে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, এপ্রিলে ২ দশমিক ১৫, মে ১ দশমিক ২২, জুনে ১ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল। চলতি মাসে এই হার ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ বেশি। মৃতের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ৬০, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ দশমিক ২০, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ দশমিক ৫১, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৭ দশমিক ৪১, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৪ দশমিক ৭২, ৫১ থেকে ৬০ বছর ২৯ দশমিক শূন্য ৪ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৪৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
মৃতের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে রোগী শনাক্তের ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম কোনো রোগী মারা যান। ওইদিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে করোনায় মারা যান ৫ জন। মার্চ মাসে শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এপ্রিল : ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় ৭ হাজার ৬১৬ জন। এপ্রিলে করোনায় মারা গেছেন ১৬৩ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
মে : ১ মে থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে যারা যান ৪৮২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
জুন : গত ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময়ে রোগী শনাক্ত হয় ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে মারা যান ১ হাজার ১৯২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২১ শতাংশ।
জুলাই : ১ তারিখ থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত চার দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ২১৪ জন এবং মারা গেছেন ১৫০ জন। চলতি মাসে মৃত্যুর হার ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
মৃতের অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৯৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৮, খুলনা বিভাগে ৮৫, সিলেট বিভাগে ৮৪, বরিশাল বিভাগে ৭৩, রংপুর বিভাগে ৫৬ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫০ জন রয়েছেন। মোট মৃত্যুর ৫০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। এর পরই চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭ দশমিক ২৫, রাজশাহী বিভাগে ৪ দশমিক ৯১, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ২৬, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ২১, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ৬৬, রংপুর বিভাগে ২ দশমিক ৮১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগ : মারা গেছেন ১০০৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে (রাজধানীতে) ৪৮১, ঢাকা জেলায় ১২৫, ফরিদপুরে ২৭; গাজীপুরে ৫২, গোপালগঞ্জে ১৫; কিশোরগঞ্জে ২৬; মাদারীপুরে ১৫; মানিকগঞ্জে ৭; মুন্সীগঞ্জে ৫৯; নারায়ণগঞ্জে ১৩৪, নরসিংদীতে ৪১, রাজবাড়ীতে ৪, শরীয়তপুরে ৭ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগ : মারা গেছেন ৫৪৪ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১৯৪, কক্সবাজারে ৪০, বান্দরবানে ১, রাঙামাটিতে ৬, খাগড়াছড়িতে একজন, ফেনীতে ২০, নোয়াখালীতে ৫১, লক্ষ্মীপুরে ২২, চাঁদপুরে ৬৭, কুমিল্লায় ১১৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ জন।
রাজশাহী বিভাগ : মারা গেছেন ৯৮ জন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১২, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মৃত্যু নেই, নওগাঁয় ৮, নাটোরে একজন, জয়পুরহাটে মৃত্যু নেই, বগুড়ায় ৬০, সিরাজগঞ্জে ৮, পাবনায় ৯ জন রয়েছেন।
খুলনা বিভাগ : মারা গেছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে খুলনা জেলায় ২৮, বাগেরহাটে ৪, সাতক্ষীরায় একজন, যশোরে ১৫, ঝিনাইদহে ৬, মাগুরায় ৩, নড়াইলে ৭, কুষ্টিয়ায় ১২, চুয়াডাঙ্গায় ৪, মেহেরপুরে ৫ জন রয়েছেন।
সিলেট বিভাগ : মারা গেছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৭, সুনামগঞ্জে ৬, হবিগঞ্জে ৬ ও মৌলভীবাজারে ৫ জন রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগ : মারা গেছেন ৭৩ জন। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ২৬, পটুয়াখালীতে ২২, ভোলায় ৬, পিরোজপুরে ৬, বরগুনায় ৪ ও ঝালকাঠিতে ৯ জন রয়েছেন।
রংপুর বিভাগ : মারা গেছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ১৮; পঞ্চগড়ে ৩, নীলফামারীতে ৭, লালমনিরহাটে ২, কুড়িগ্রামে ২, ঠাকুরগাঁওয়ে ২, দিনাজপুরে ১৪, গাইবান্ধায় ৮ জন রয়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগ : মারা গেছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৩১ জন, নেত্রকোনায় ৪, জামালপুরে ১১ ও শেরপুরে ৪ জন।
Leave a Reply