মঙ্গলবার, ২৩ Jul ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশ বরেণ্য সংগীত শিল্পি এন্ড্রু কিশোর

না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশ বরেণ্য সংগীত শিল্পি এন্ড্রু কিশোর

রাজশাহী প্রতিবেদক ॥ দেশ বরেণ্য সংগীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নাই। তিনি রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় চিকিৎসারত অবস্থায় আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬.৫৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি ক্যান্সার ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। রোববার থেকে তাঁর অবস্থ্রা আরো অবনতি হয়।
প্যাট্রিক বিশ্বাস জানান, দুপুরে এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বাড়ির ক্লিনিকেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে রোববার বিকেলে এন্ড্র কিশোরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি কারো সাথেই কোনো কথা বলতে পারছেন না। তার শারীরিক সুস্থতার জন্য সবাইকে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তার স্বজনরা।
এদিকে, রোববার রাত ১০টার দিকে এন্ড্রু কিশোরের ফেসবুক পেজ থেকে তার স্ত্রী একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার বিবরণ জানিয়ে লেখেন, ‘এখন কিশোর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কি ভাব, বলে কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বর কে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিয়ো না।’
তিনি লিখেছেন, ক্যানসার এর লাস্ট স্টেজ খুব যন্ত্রনাদায়ক ও কষ্টের হয়। এন্ড্রু কিশোরের জন্য সবাই প্রাণ খুলে দোয়া করবেন, যেন কম কষ্ট পায় এবং একটু শান্তিতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যেতে পারে। তিনি আরো লিখেন, আমার মনে হল, কিশোর শুধু আমার বা আমাদের সন্তানের বা আমাদের পরিবারের নয় বরং দেশের মানুষের একটা অংশ বা সম্পদ। তাই এই কথাগুলো দেশের ভক্ত স্রোতাদের বলা বা জানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি আরো লিখেছেন, এটাই শেষ পোস্ট, এর পর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়, কিশোর থাকবে না অথচ আমি থাকবো, মেনে নিতে পারছি না। এই অসময়ে, সবাই সাবধানে থাকবেন, নিজের প্রতি যতœ নিবেন, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন আর এন্ড্রু কিশোরের এর প্রতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন ও প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।
এন্ড্রু কিশোরের জন্ম রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকযাত্রা শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল’ প্রভৃতি। এন্ড্রু কিশোর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর রাজশাহী এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু বলেন, দেশে ফিরলেও এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভাল যাচ্ছিলনা। গতকাল রোববার সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থার খুব অবনতি ঘটেছিলো। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেও তিনি ছিলেন না।
উল্লেখ্য গত বছরের ৯ সেপ্টেস্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর থেকেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। ছয়টি ধাপে তাকে ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এর পর ১১ জুন রাতে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাকে দেশে আনা হয়। এরপর থেকে শেষ দিন পর্যৗল্প তিনি রাজশাহীতে ছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com