মঠবাড়িয়া প্রতিবেক ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। প্রতি জো-তে স্বাভাবিকের চেয়ে নদী ও খালের ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধিতে পৌর শহরের একটি ওয়ার্ডসহ ৪টি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বসত ও রান্না ঘর পানিতে ডুবে থাকায় এলাকার মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে মানবেত জীবন যাপনসহ হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমকি অতিরিক্ত পানি সেচ দিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করতে হচ্ছে। এছাড়াও জোয়ারের লোনা পানিতে ফসলি জমি ও জমির বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় আমন বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ কতৃপক্ষ নির্বিকার। জানাযায়, গত ২০ মে উপকূলীয় মঠবাড়িয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসের পানিতে মঠবাড়িয়া-গুলিশাখালী খালের দুই পাড়ের পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা ও টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাঁধটির কিছু অংশ খাল গর্ভে বিলীন হয়ে লোকালয় ৩/৪ফুট পানিতে ডুবে যায়। গেল পূর্ণিমার কারণে গত কয়েকদিন ধরে বলেশ্বর ও বিষখালী নদীসহ এলাকার খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ পানি বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো-তে পানিতে নি¤œাঞ্চলের বাসা বাড়ি ডুবে থাকায় স্থানীয়দের ৫/৬ দিন দারুণ দুর্ভোগে পড়তে হয়। ভাটির সময় পানি কমলেও অবিরাম বর্ষণের পানিতে মাঠ ঘাট ডুবে থাকায় দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
এদিকে সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, আম্পান পরবর্তী কর্তৃপক্ষ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিলেও দুর্যোগের প্রায় দু’মাস অতিবাহিত হতে চললেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তারা আরও জানান, ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও জো’র অতিরিক্ত পানিতে আমরা ভাসছি। পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের মৃত সেকান্দার মৃধার পুত্র বিদেশ ফেরত ইউসুফ মৃধা (৩৫) জানান, ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বসত বাড়ি ডুবে থাকায় আম্পানের পর স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে পৌর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল গফ্ফার বলেন, আম্পানের ফলে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পানিবন্দী হয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী কামাল বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে পানি না কমা পর্যন্ত এখানের মানুষদের জোয়ার-ভাটা হিসেব করে বসবাস করতে হয়। এ অবস্থায় দ্রুত বাঁধ মেরামত ও সংস্কার করা না হলে এই এলাকা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট টিকিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার বলেন, আম্পানে তাঁর ইউনিয়ন পরিষদ ঘেঁষা ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ফুট বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পৌরশহরের একটি ওয়ার্ড ও তাঁর ইউপির ৬ ওয়ার্ড পানিতে ডুবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরম পর্যায় পৌঁছেছে। বাড়ি ঘরে পানি থাকায় মৃত ব্যক্তির লাশ পানি সেচ দিয়ে দাফন করতে হয়। তিনি আরও বলেন, আম্পান পরবর্তী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মঠবাড়িয়া সফরে এলে ওই বাঁধ দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। পিরোজপুর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী দ্বিপক রঞ্জন দাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।
Leave a Reply