নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদ উল আজহা নিয়ে বরাবর পশু খামারিদের অনেক আয়োজন ও পরিকল্পনা থাকলেও এবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারাই। বরিশাল বিভাগের কোরবানির পশুর চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশই অন্য বিভাগ বা জেলা থেকে আনতে হবে বলে জানিয়েছে প্রাণী সম্পদ অধিদফতর। জানা গেছে, যে সংখ্যক পশুর চাহিদা থাকে এই বিভাগে তার এক-তৃতীয়াংশ স্থানীয়ভাবে মেটানো সম্ভব হবে। এদিকে প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে আসন্ন কোরবানিতে পশু বিক্রি ও দাম নির্ধারণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পশু খামারি ও পশু বিক্রেতারা। করোনা সংকটের কারণে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্নও হতে পারে বলে ধারণা করছেন পশু খামারি, বিক্রেতা ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবারের মত এ বছরও ঈদুল আজহায় পশুর সংকট দেখা দেবে। বিগত বছরের চেয়ে এবার কম সংখ্যক পশু কোরবানি হতে পারে। ৬ জেলায় যে সংখ্যক পশুর চাহিদা আছে তার তিন ভাগের একভাগ পশু বরিশালের খামারিদের হাতে রয়েছে।
এদিকে করোনা সংকটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা এবার কোরবানি নাও দিতে পারে। যে কারণে দামও সহনীয় হওয়ার আশা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বরিশাল বিভাগে ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৫টি গরু-মহিষ এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১টি ছাগল-ভেড়া কোরবানি দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ মোট ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬টি পশু কোরবানি হয়েছিল বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায়।
প্রতিবছর বিগত বছরের চেয়ে ৩ ভাগ বেশি ধরে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। তবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় খামারিদের কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৪১টি। অর্থাৎ চাহিদার চারভাগের একভাগেরও কম। অধিদফতরের বরিশালের উপ পরিচালক ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, গতবছর শেষ মুহূর্তে পশু কোরবানি দেয়া প্রায় সব পরিবার বা ব্যক্তি এবারও কোরবানি দেবেন বলে ধারণা। এমন হিসেবে গত বছরের সমান পশুর চাহিদা থাকবে এবারের কোরবানিতেও। তিনি বলেন, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষিরা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা পশু এনে বিক্রি করায় বরিশালে কখনও সংকট হয় না। গতবছর চাহিদা মেটানোর পর বিভাগের হাট-বাজারে ৪০ হাজার ৪২৬টি গরু-মহিষ এবং ৮ হাজার ৬৩২টি ছাগল-ভেড়া অবিক্রীত ছিল বলে তিনি জানান। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণী সম্পদ বৃদ্ধিতে আগের চেয়ে অবস্থা উন্নীত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের তরুণ ব্যবসায়ীরা পশু খামারের ব্যবসায় ঝুঁকছে। এ অঞ্চলে চাহিদার বড় সরবরাহ আসে চরাঞ্চলে কৃষকদের পালিত পশু থেকে।
নগরীর চাকরিজীবী গোলাম মোস্তফা বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে পশু কোরবানি অনেকটাই কমে যেতে পারে। ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই আর্থিক সমস্যায় কোরবানি নাও দিতে পারেন। তাই করোনায় কমতে পারে পশু কোরবানি। খামারিরা বলছেন, করোনার কারণে গত চারমাস ধরে গোখাদ্যের দাম অনেকটাই চড়া রয়েছে। সেই হিসেবে পশু পালনে গত চারমাসে খরচও বেড়েছে। সবমিলিয়ে পশুর দামও কোরবানিতে কিছুটা বাড়াতে হবে। আর ভালো দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে। বরিশাল নগরীর ভাটিখানির পশু খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ৮-১০টি গরু থাকে আমার। কিন্তু এবছর করোনা শুরুর আগেই আমার সব গরু বিক্রি করে দিয়েছি। তবে এখন মনে হচ্ছে সেটাই ভাল হয়েছে। নতুবা এখন বিক্রি করা বা লালন পালন করিয়ে বড় করাই কঠিন হয়ে পড়তো।
ঝালকাঠি জেলার পশু খামারি হাকিম হাওলাদার বলেন, করোনার প্রভাবে এবার ষাঁড় গরু খামারে তোলেননি। তবে দুটি গরু রয়েছে কোরবানিতে বিক্রি যোগ্য। এ দুটির দাম ১ লাখ করে চাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, এবার কোরবানি দেয়ার হারের ওপর দাম নির্ভর করবে। জাহিদুল ইসলাম সুমন নামে আরও এক খামারি বলেন, করোনার ভয়ে এবার গরুই উঠাইনি। যা আছে তার দাম পাবো কিনা তাতে সন্দেহ আছে। বরিশালের বৃহৎ পশুর হাট বানারীপাড়ার গুয়াচিত্তা, বাকেরগঞ্জের বোয়ালী, কাগাসুরা গরুর হাটে তোরজোর চলছে। গুয়াচিত্তা পশুর হাটের ইজারাদার মিলন মৃধা বলেন, সীমান্ত এলাকার পশুর উপর এ অঞ্চলের হাটগুলো নির্ভরশীল। এবার করোনায় পশু আমদানি এবং দাম নিয়ে তারা বেশ সন্দিহান। এদিকে কোরবানি দেয়ার সংখ্যা কম হলে পশুর হাটে সিন্ডিকেট যাতে দাম বৃদ্ধি করতে না পাড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার দাবি জানান সাধারণ মানুষ। বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটি সদস্য সচিব মানুওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, করোনার প্রভাবে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ মানুষ কোরবানি দিবেন না। গত ৩ মাসে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হয়নি। এ অবস্থায় কোরবানিতে পশুর দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকারির পক্ষ থেকে মনিটরিং এরও দাবি জানান তিনি।
Leave a Reply