হিমায়িত মাংস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসআরপি ট্রেডিং। সেটির সহকারী ব্যবস্থাপকের (বিক্রয় ও বিপণন) দায়িত্বে ছিলেন ফারুক হোসেন। প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন হতো তার হাত দিয়েই। এ সুযোগকে অবশ্য ব্যবহার করেন অসদুদ্দেশ্যে। আত্মসাৎ করে বসেন একেবারে ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর সেই অর্থে ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটসহ গড়েছেন বিভিন্ন সম্পদ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এরই মধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে দায়ের মামলায় ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে পল্টন থানা পুলিশ।
এসআরপি ট্রেডিংয়ের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী নাজমুল হাসান জানান, কোম্পানির মালিক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শরিফুল হাসান। হিমায়িত মাংস বিদেশ থেকে এনে কোল্ডস্টোরেজে রেখে বিক্রি করে আসছিল এই প্রতিষ্ঠান। আর এতে ২০১৮ সাল থেকে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ফারুক হোসেন। তবে চলতি বছরের শুরুতে তার অনিয়ম-দুর্নীতির কিছু তথ্য সামনে আসতে থাকে। হঠাৎ চলতি মাসের শুরুতে ক্রেতারা জানান, এসআরপির স্টোরেজ থেকে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই প্রতিষ্ঠানটির সবাই নড়েচড়ে বসেন। থার্ড পার্টির মাধ্যমে তেজগাঁও এলাকার একটি কোল্ডস্টোরেজে মাংস রাখা হতো। সেখানেও ১৬০ টন মাংস থাকার কথা ছিল। তবে অডিট শাখার লোকজন গিয়ে মাত্র ১৯ টন মাংস পায়। এর মধ্যে ১০ টন মাংস অগ্রিম বিক্রি করে টাকা নেন ফারুক। স্টোরে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের মাংসও নিজ কোম্পানির মাংস বলে বিক্রি করে দেন তিনি। পুরো ঘটনার সঙ্গে স্টোরের অপর এক সদস্যও জড়িত। নির্বিঘ্নে জালিয়াতি করতে তাকেও মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন ফারুক হোসেন।
নাজমুল হাসান আরও জানান, কোম্পানির সঙ্গে এমন ভয়াবহ জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়ার পর ফারুককে শোকজ করা হয়। এর পর কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাকে। পরে অবশ্য কোম্পানির সঙ্গে ফারুকের সমঝোতা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ তিনি ফেরত দেবেন। এরই মধ্যে ফারুক একটি ফ্ল্যাট কেনেন। ওই ফ্ল্যাটসহ সব মিলিয়ে দেড় কোটি টাকার মতো পরিশোধ করেন তিনি।
এদিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ফারুকের স্ত্রী এসআরপি ট্রেডিংয়ের এক কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান, তার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তখন কোম্পানির লোকজন কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান। তাকে পাওয়া না গেলে কোম্পানির বাকি টাকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। নিজে গা-ঢাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ফাঁসাতে পারেন এমন আশঙ্কাও ছিল। এর পর এসআরপি ট্রেডিংয়ের লোকজন বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেন। এটা জানার পর আবার ফারুক প্রকাশ্যে এসে কোম্পানিকে বাকি টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেন। ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফায় কিছু টাকা পরিশোধ করলেও ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাকি রেখে মোবাইল বন্ধ করে তিনি পালিয়ে যান।
জানা গেছে, এসআরপির অর্থ কোম্পানির হিসাব নম্বরে না এনে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন তিনি। অন্তত ২০টি ব্যাংকে তার নামে-বেনামে হিসাব নম্বর রয়েছে। এর আগে ফারুক আরকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার ছিলেন। ওই কোম্পানি থেকেও ১২ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৮ টাকা চুরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফারুকের স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
পল্টন থানার ওসি মো. সেন্টু মিয়া জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফারুককে গত ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।
Leave a Reply