সাবিহা আলম। রংপুর সরকারি কলেজের এই শিক্ষার্থীকে তার বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন মানসিক চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক তার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেন উদ্বিগ্নতা। যার ফলে প্রয়োজনীয় ঘুম হচ্ছে না। ঘুমে প্রায়ই দেখছেন দুঃস্বপ্ন। সাবিহা এইচএসসি পরীক্ষার্থী। করোনায় গৃহবন্দি সাবিহার সারাদিন কাটে ভীষণ দুশ্চিন্তায়। সাবিহা বলেন, সারাদিন থাকতে হয় বাড়িতে।
সাবিহার চিকিৎসক মানসিক রোগ বিশেষঞ্জ ডা. ইমতিয়াজ সাব্বির। বসেন রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তিনি বলেন, সাবিহার তেমন কোনো সমস্যা নেই। সর্বক্ষণ পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। আর ঘুমালেও তা স্বাস্থ্যসম্মত হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আপনি খেয়াল করে দেখবেন আমরা অনেকেই স্বপ্ন দেখি- পরীক্ষার হলে বসে আছি, কিছু লিখতে পারছি না, পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে আসছে কিংবা কলমে কালি নেই। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের মাঝে একটা পরীক্ষা ভীতি রয়েছে। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা পিছিয়ে যাবার কারণে তারা স্বভাবতই দুশ্চিন্তা করছেন। আমি এসব পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বলতে চাই- করোনা, পরীক্ষা এসব নিয়ে তারা অনেক চাপে রয়েছে। তাদের একটু চাপমুক্ত রাখুন। তাদের এই সময়টাতে রাগারাগি না করাই উত্তম।
প্রাণঘাতী করোনায় থমকে আছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থীর। ১লা এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল তাদের এই পরীক্ষা। পরীক্ষা না হওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরাও। রাজধানীর হলিক্রস কলেজের পরীক্ষার্থী মালিহা মিম। তার ব্যাংকার বাবা মমিনুল রশিদ বলেন, লেখাপড়া আর কই? বই খাতা উঠিয়ে ফেলেছে প্রায়। এখন সারাদিন ল্যাপটপ নিয়েই পড়ে আছে। আরেক অভিভাবক তমা সাহা বলেন, পড়তে বসতে বললেই রেগে যায়। আগে বাড়িতে ৩ জন শিক্ষক আসতেন পড়াতে। করোনার কারণে তাদের আসতে না করেছি। প্রথম দিকে পড়তে বসতো এখন ধীরে ধীরে পড়ালেখাই ছেড়ে দিয়েছে।
কিন্তু কবে হচ্ছে এই এইচএসসি পরীক্ষা? ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, করোনার এই সময় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই অবস্থায় যদি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে দেশজুড়ে কয়েক লাখ মানুষ একত্র হবেন। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অনেকের ভিড় হবে। তাই আপাতত এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সন্তানদের ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হবে না।
এইচএসসি পরীক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নেয়া হবে বলে একাধিকবার জানানো হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছি। কলেজগুলো খুললেই ১৫ দিনের মাথায় পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।
এ ছাড়াও পরীক্ষা দ্রুততম সময়ে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত এইচএসসি পরীক্ষা হয় দেড় মাসে। এবার তা করা হতে পারে এক মাসে। বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি থেকে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। আগামীতে করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পরীক্ষার বিষয়টি।
একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কবে নাগাদ পরীক্ষা হতে পারে এর উত্তর দিতে পারেননি কেউই। সকলেই করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল বলে জানান। একটি কথা উঠেছিলো সিলেবাস কমিয়ে আনার। তবে এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, বিষয় কমিয়ে লাভ কী? করোনার কারণে যদি কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, কোনোভাবেই এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না, আরেকটি বছর চলে এসেছে বা সময়ে একেবারেই কুলাচ্ছে না, তখন দূরবর্তী একটি সম্ভাবনা হিসেবে বিষয় কমানোর কথা ভাবা যেতে পারে।
Leave a Reply