নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পুরনো কর্মচারী নুরুদ্দিন। প্রেসক্লাবের ডিউটি শেষে কখনো রিকশা টানেন, কখনো ফুটপাতে দোকানদারি করেন, কখনোবা কাঁধে তুলে নেন ভারী বোঝা। শুধু সংসার চালানোর জন্যই নয়। বুকের ভেতর কিছু আশা ছিল তার। সেসব আশা লালন-পালনেই দিনরাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে তাকে। সাব্বির ও জুবায়ের। তার দুই চোখের মণি। তাদের লেখাপড়ার ব্যয় মেটাতেই তার এ প্রাণান্ত পরিশ্রম। দিন যায়, তার আশাগুলোও লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে। সাব্বির অনার্স করছে; জুবায়ের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে। আর মাত্র কটা দিন। তার পরই আসবে তার সুখের দিন। তাই ঘামে ভেজা মুখে তার লেপ্টে থাকে হাসি।
নুরুদ্দিনের সেই হাসি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিভে গেছে আশার দীপ। চিরতরে। সাব্বির আর জুবায়ের। দুই সহোদর আর কোনো দিন আশা হয়ে, ভরসা হয়ে পিতার দায়ভার কমানোর স্বপ্ন দেখাবে না। বরং পাহাড়সম ভারী হয়ে তারা ভর করেছে নুরুদ্দিনের কাঁধে। প্রবীণ এ মানুষটির দুই কাঁধে আজ দুই পাহাড় সাব্বির ও জুবায়ের। দুজনেই এখন লাশ।
গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় এশার নামাজের পর মসজিদে যে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটে, সেই আগুনে পুড়ে আহত হয় সাব্বির ও জুবায়ের। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হলেও বাঁচানো যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে প্রায় ২৮ বছর ধরে কাজ করেন নুরুদ্দিন। প্রেসক্লাবের ডিউটি শেষে কখনো রিকশা চালিয়ে, ফুটপাতে দোকানদারি করে, কখনো কুলিগিরি করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। আর কয়েকটা দিন পরই ছেলেরা সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার উপযুক্ত হবে। তখন নুরুদ্দিন শুধু প্রেসক্লাবের চাকরিটাই করবেন, অন্য সব বাদ। এটিই ছিল তার ইচ্ছা। তার আশা আর পূরণ হলো না।
এ দুঃসময়ে নুরুদ্দিন ও তার স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং শহরের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply