ফারহান-উর-রহমান সময়, তজুমদ্দিন ॥ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে দৈনিক দক্ষিণের খবর কথা হয় ষাটোর্ধ্ব মিন্টু মোল্লার সাথে আবদুল বারেকের বর্তমানে বয়স ৭০ বছর। দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পেশায় একজন কৃষক। মাত্র ২০ বছর বয়সে বাবা মাসহ পরিবারের সকলকে হারিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। সেটা ৭০ এর ১২ নভেম্বরের কথা। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে প্রবল স্রোতে সেই রাতে পরিবারের ১২ জন সদস্যর মধ্যে ১১ জনকে হারিয়ে সর্বহারা হন তিনি। কিছুদিন এলোমেলো থাকার পর নতুন এক জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আ: বারেক বলেন, হারানো সব স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। আমি তখন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। বাবা, মা, ভাই বোনসহ পরিবারের মোট সদস্য ছিল ১২ জন। ঝড়ের দুই দিন আগে মনপুরার সাকুচিয়া ইউনিয়নে আমি বাবার সাথে যাই ধান কাটার জন্য। একদিন পর বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দিবগত রাতে শুরু হয় ঝড়ের তা-ব। ১২ থেকে ১৩ ফুট পানি। আমি আর বাবা একটি খেুজুর গাছে উঠি। কখন যে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন তা আর বলতে পারব না। খেজুর গাছের পাতা ধরে জোয়ারের পানির সাথে ভাসতে থাকি। এভাবে সারা রাত থাকার পর সকালে পানি কমতে থাকলে গাছ থেকে নেমে দেখি সবই ধ্বংসস্তুপ।
চারদিন পর মনপুরা থেকে বাড়িতে এসে দেখি খালি ভিটা পড়ে আছে। মা, ৬ ভাই, ৩ বোন, নানী কেউ নেই। কোথায় থাকব কী নিয়ে বেঁচে থাকব এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আশ্রয় নেই পাশের বাড়িতে ভাঙ্গাচুরা টিন দিয়ে কোনো রকম একটি ঘর তোলে বসবাস করা সুলতান আহম্মদের ঘরে। সরকারি ভাবে যে খাবার পাই তা খেয়েই দিনযাপন করতে থাকি। পাশাপাশি খুঁজতে থাকি পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া লোকজনকে। দীর্ঘ ১৫ দিন খোঁজার পরও তাদের সন্ধান মেলেনি।
স্বজন হারানো সোনাপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ির মিন্টু মোল্লা (৬৬) বলেন, ৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার বয়স ছিলো ১৬ বছর। ঝড়ে আমাদের বাড়ির ২৫ জনে ৯জন প্রাণ হারায়। ২/৩ দিন পর নিহতদের লাশ পাই কচুরী পানার নিচে। পরে সেই লাশগুলো উদ্ধার করে গণকবর দেই। তখন কোন ঘরবাড়ি না থাকায় ঝুপড়ী ঘরে অবস্থান নিয়ে চলতে থাকে বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধ। সেই থেকে ৫০ বছর হয়ে গেলেও স্বজন হারানোর সেই কথা মনে হলে কষ্টে বুক ভারী হয়ে উঠে।
উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা। ওই সময়ে এ উপজেলার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। যা একটি এলাকার প্রায় ৪৬ শতাংশ প্রাণ হারানোর ঘটনা ছিলো অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। বাংলদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিলো ভোলা সাইক্লোন।
Leave a Reply