দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সরকার যমুনা নদীর ওপর নির্মিত প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ ব্যয় মিটিয়ে এখন বিপুল অংকের মুনাফা করছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের পর গত ২২ বছরে নির্মাণ ব্যয় ছাড়িয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। নির্মাণের ২৫ বছরে ব্যয় উঠে আসার প্রাক্কলন করা হলেও ১৯ বছরের মাথায় তা উঠে আসে। বিগত ১৯৯৮ সালে উদ্বোধন হওয়া বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় বাবদ সরকারের আয় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফলে নির্মাণ ব্যয় ছাড়িয়ে অতিরিক্ত আয় হয়েছে ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে যমুনা নদর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হয়। বিগত ১৯৯৮ সালের জুনে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। উত্তরের কৃষিজীবী মানুষের জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৬টি জেলায় বিভিন্ন পরিবহন যাতায়াত করে। বর্তমান সরকার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেটি নির্মিত হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপারে প্রতিটি বড় বাসকে ৯০০, ছোট বাসকে ৬৫০ টাকা, বড় ট্রাককে ১৪০০ টাকা, মাঝারি ট্রাককে ১১০০ টাকা ও ছোট ট্রাককে ৮৫০ টাকা হারে টোল দিতে হয়। সেতুটি নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেয়া ঋত ২০৩৪ সাল নাগাদ পরিশোধ শেষ হবে। সেতু নির্মাণের পর প্রথম বছরে টোল আদায় হয়েছে ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আদায় হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে ৩২৪ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ওদিন সর্বোচ্চ ২৭ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে। সেতুটি নির্মাণকালে ২৫ বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনার পরিকল্পনা করা হলেও ৭ বছর আগেই নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুতে প্রতি তিন থেকে চার বছর পরপর টোল আদায় বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেতুর ব্যবহারও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে টোল আদায়। ফলে সেতু নির্মাণের খরচ ২৫ বছরে তুলে আনার কথা বলা হলেও ২০১৭ সালেই নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে গড়ে ৫০ কোটি টাকা করে টোল আদায় হয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু সেতু খুলে দেয়ার পর থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টোল আদায়ের পরিমাণ বছরে ১০০ কোটি টাকার নিচে ছিল। কিন্তু ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে টোল আদায়ের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকায় উঠে আসে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ বেড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে যায়। আর ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ওঠে ৪০০ কোটি টাকায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল আদায় হয় ৫০০ কোটি টাকার ঘরে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরই তা ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
Leave a Reply