চরফ্যাশন প্রতিবেদক ॥ করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির জন্য দীর্ঘদিন সরকারি বন্ধ ও স্থানীয়ভাবে লকডাউন থাকায় শ্রমজীবী লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা ঢাকা চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতো তারা এখন নিজ এলাকায় কর্মহীন হয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে।
করোনাকালের এ সময়টা চলছে বর্ষাকাল। বর্ষার এ মৌসুমে দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের খাল ও বিলাঞ্চলগুলোতে পানি জমে রয়েছে। তাই করোনাকালে এ সময়ে ভেসাল জাল প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ শিকারে অলস সময়টুকু পার করছে কর্মহীন বেশ কিছু লোকজন। এতে করে কালের আবর্তমানে হারিয়ে যাওয়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ভেসাল জালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে চোখের পড়ার মতো।
ভেসাল জাল তৈরিতে প্রয়োজন হ্য় দুই থেকে তিনটি বড় বাঁশ। এ জাল মশারির নেট দিয়ে তৈরি করা হয়। দুই হাজার টাকা হলেই তৈরি করা যায় একটি ভেসাল জাল। ভেসাল জাল তৈরি করার পর বাঁশের সঙ্গে কৌশলে জাল লাগিয়ে স্থানীয় খাল বা বিলে বানানো হয় মাছ ধরার ফাঁদ। তার পরে তা ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় ধরে পানিতে ফেলে রাখা হয়। এরপর ঢেঁকির মতো জাল লাগানো বাঁশে পা দিয়ে চাপ দিলে জাল উপরে ওঠে। এভাবেই ভেসাল জালে আটকা পড়ে নানা প্রজাতির মাছ। এতে করে একদিকে যেমন কর্মহীন শ্রমজীবি মানুষ কিছু আয় করতেছে , তেমনি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে দেশীয় প্রজাতির মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ, আবুবকরপুর,আমিনাবাদ আবদুল্লাহপুর ও আহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, অতি জোয়ার এবং চলতি বর্ষায় টানা বর্ষণের কারনে নদী-খাল-বিল-পুকুর পানিতে ডুবে একাকার হয়ে রয়েছে, আর সেখানে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজনকে নিজ বাড়ির পাশের খাল ও বিলে ভেসাল জাল প্রয়োগ করে মাছ শিকারে অলস সময় কাটাচ্ছে। তবে ভেসাল জাল প্রয়োগকারী কিছু জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে ভেসাল জালের ব্যাবহার বৃদ্ধি পেলেও আগেরমতো জালে মাছ উঠছেনা, তারপরেও তারা এ জাল দিয়ে মাছ শিকারে ভাল একটি সময় কাটাচ্ছে।
উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া খালে ভেসাল জালে মাছ ধরার সময় আলী আজগর বরিশালটাইমসকে জানান , তিনি ঢাকায় নির্মান শ্রমিকের কাজ করতেন, করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে নিজ বাড়িতে বেকার সময় কাটছিলো, হাতে কোনো কাজও নেই, তাই এখন অলস সময় কাটে তার এই মাছ ধরার কাজে।তিনি জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করেই মাছ ধরার সময় ঠিক করেন।
আবুবকরপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আক্তার ও শাহাজল হাওলাদার এ বছর নিজ ঘরের পিছনে ছোট খালটিতে ভেসাল জাল পেতেছেন। তারা জানান, প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, আবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মাছ ধরে তা নিজ পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। তার জালে উঠছে শৌল, টাকি, পুটি, শিং, কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ।
আমিনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক ছগির, আবদুল্লাহপুরের ঝিলন জমাদর ও আহাম্মদপুরের সালাম মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, আগের মত এখন আর খালে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। তারপরেও করোনাকালীন এ সময়ে হাতে কোনো কাজ না থাকায় মাছ ধরে অবসর সময় পার করতেছি, এসময় যে পরিমান মাছ ধরতেছি, তা দিয়ে পরিবারের মাছের চাহিদা পুরন করতেছি।
চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার বরিশালটাইমসকে বলেন, মৎস্য আইনানুযায়ী উন্মুক্ত জলাশয়ে, খাল-বিলে মাছ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, নদী বা খালে কোনো কিছু দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দেয়া, যে কোনো ধরণের ফাঁদ ব্যবহার ও স্থাপনা নির্মাণ এবং ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তিনি আরও বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় দু পাশেই নদী, এখানে জেলেদের সংখ্যাও অনেক। করোনাকালীন সময়ে জেলেরা নদীতে যেতে পারছেনা, বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে। তাই এ সময় ভেসাল জালের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আমরা শীগ্রই অভিযান পরিচালনা করে চরফ্যাশন থেকে এ জাল অপসারণ করবো।
Leave a Reply