পটুয়াখালী প্রতিবেদক ॥ কাজ না করেই আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের বিল বাবদ এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার তিন শ’ পয়ত্রিশ টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে উত্তোলন করা এবং উক্ত টাকা আবার সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ প্রশাসন শাখার উপসচিব আবু সাইদ মোঃ কামাল স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে গত ৬ আগস্ট এ আদশ দেওয়া হয়েছে।
ওই আদেশে আরো বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ০৩(খ) এবং (ঘ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ পরিলক্ষিত হওয়ায় শীঘ্রই পিআইও‘র বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজু করা হবে। তবে প্রকল্পের নামে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় পিআইও‘র সহচর ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পিআইও তপন কুমার ঘোষ বলেন, কোন প্রকার তদন্ত এবং দোষী সাব্যস্ত ছাড়া জোর-জবরদস্তি করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আইন পরিপন্থী। অভিযোগ রয়েছে-২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায়-গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর-০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯.১৩১৪ স্মারকে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার, ৩শ প্রয়ত্রিশ টাকা বরাদ্দ আসে। ওই বরাদ্দে কলাপাড়া উপজেলার খাজুরা, চালিতাবুনিয়া, গোড়া আমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মী বাজার, নিশানবাড়িয়া, গামুরিবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজশিববাড়িয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ নয় লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া নিশান বাড়িয়া ও গামুরি বুনিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। নীলগঞ্জ ও গোড়া আমখোলা পাড়া আশ্রয়নের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং খাজুরা ও ফাসিপাড়া দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। বাস্তবে এ ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার কোন কাজ করা হয়নি।
অথচ গত ৭ এপ্রিল কাজ না করেই উল্লেখিত প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দকৃত এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার তিন শ’ পয়ত্রিশ টাকা তুলে নিয়েছে মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর এই অর্থ তুলে নেয়ার নেপথ্যে রয়েছে কলাপাড়া পিআইও তপন কুমারসহ পিআইও অফিসের কতিপয় কর্মচারীরা। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর সারিকা ট্রেডার্সের মালিক শামীম হাতিয়ে নেওয়া অর্থ কোষাগারে জমা দিলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন আইনগত ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে সদ্য বদলি হওয়া ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান,ওই প্রকল্পে বিলসহ কাগজপত্রে যেসব স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে তা জাল। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন চিঠিপত্র তিনি কলাপাড়ায় থাকাকালীন রিসিভ করেননি। এধরনের কোন ফাইল চালু তথা এ প্রকল্পের কোন ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খোলা হয়নি। পূবালী ব্যাংকে যে একাউন্ট খোলা তার সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তার সকল স্বাক্ষর জাল করে হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল তাও কর্মস্থল ত্যাগ করার পনের দিন পরে ব্যাংক হিসাব ছাড়া সরাসরি ঠিকাদারের হিসাবে ট্রান্সফার করার বিষয়টি কীভাবে সম্ভব হলো। এই প্রকল্প সম্পর্কে ইউএনও অবগত নয় বলে দাবী করা হয়। এ প্রসঙ্গে কলাপাড়ার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, এরকম অনিয়মের ঘটনা শুনে তিনি মাঠ পর্যায় পরিদর্শন করেছে এবং ১০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের কোন কাজ হয়নি। তাৎক্ষণিক বিষয়টি তিনি ডিসিকে অবহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন-শুধু তাই নয়, ব্যাংক হিসাব খোলায় অনিয়ম রয়েছে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে রাঙ্গাবালীতে চাকুরীকালীন সময়ে এই তপন কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ করেন বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশফাকুর রহমান। তারও আগে ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ায় চাকুরীকালীন সময়ে টিআর-এর চাল আত্মসাতের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’
Leave a Reply