নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এবার চিকিৎসা অবহেলায় বরিশাল নগরীর বেলবিউ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তঘর গ্রামের বাসিন্দা শাহানাজ পারভীন (৪০) নামে ওই নারী সদর রোডস্থ বিবির পুকুরের পশ্চিম পাশের হাসপাতালটিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে অপারেশন থিয়েটারে প্রাণ হারালে শুরু হয় উত্তেজনা। এই বিয়োগান্তের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তাদের দায় অস্বীকার করলেও রোগীর স্বজনরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক জি.কে চক্রবর্তী এবং মেডিকেল অফিসার কাজী আহম্মদউল্লাহকেই দায়ী করছে। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ দিকে শহরের ব্রাউন কম্পাউন্ড রোড এলাকার রয়েল সিটি হসপিটালে এক তরুণী অনুরূপভাবে চিকিৎসা অবহেলায় প্রাণ হারায়। এ বিষয়টি থানা পুলিশ হয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে ঠেকেছে। জানা গেছে, ওই আলোচিত মামলার আসামি চার চিকিৎসকসহ অন্তত ৭ জন প্রকাশ্যে ঘুরছে। সেই বিয়োগান্তের রেস না কাটতেই এবার এক এমপির শ্যালক কাজী মফিজুল ইসলাম কামালের মালিকানাধীন হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় প্রাণ গেল গর্ভবর্তী নারীর। নিহতের স্বজনরা জানান, জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার তরিকুল ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ পারভীন এই প্রথম তার গর্ভে সন্তান ধারন করেন। অন্তঃসত্ত্বার বয়স পাঁচ মাস হওয়ার পরে আকস্মিক রক্তক্ষরণ শুরু হলে গত ২৪ জুলাই শাহানাজ পারভীনকে বরিশাল শহরের বেলভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে হাসপাতালের ৩০৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি থেকে বিশেষজ্ঞ গাইনী চিকিৎসক জি.কে চক্রবর্তীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ওই প্রাইভেট হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রামে শাহানাজের গর্ভের সন্তানের ভালে রিপোর্ট দেওয়া হয়। এরপর গত ১২ আগস্ট বাইরের একটি ডায়াগনস্টিকে সেন্টারে ফের আল্ট্রাসনোগ্রামে তার গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করছে না রিপোর্ট আসে। পরে রাতে চিকিৎসাধীন বেলভিউতে আবারও আল্ট্রাসনোগ্রাম করে গর্ভে বাচ্চা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানানো হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, ১২ আগস্ট বেলভিউতে করা ওই আল্ট্রাসনোগ্রামে শাহানাজের গর্ভের সন্তান মৃত এমন রিপোর্ট আসলেও কর্তৃপক্ষ তা গোপন করে তাদেরকে ভুল তথ্য দিয়েছে। একই সাথে গর্ভে সন্তান মৃত থাকার পরেও গর্ভপাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপনেই বৃহস্পতিবার রাতে শাহানাজের মৃত্যু হয়। আর মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জি.কে চক্রবর্তী এবং মেডিকেল অফিসার কাজী আহমদউল্লাহর অবহেলাকেই দায়ী করেছেন স্বজনরা।
নিহত শাহানাজের দেবর মিজানুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শাহানাজ পারভীনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার কাজী আহমদউল্লাহ তাকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। সেই অনুযায়ী তিনি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করেন। এরই মধ্যে দুপুরের পরপরই শাহানাজের অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাৎক্ষনিক বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানালেও তিনি গুরুত্ব দেননি। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলে কিছুক্ষণ পরেই পারভীনের মৃত্যু হলেও রাত ৯টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়। চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করে প্রাইভেট হাসপাতাল বেলভিউ এর চিকিৎসক জি.কে চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ আগস্ট আলট্রাসনোগ্রামে শাহানাজের গর্ভের বাচ্চা সুস্থ বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট গর্ভের বাচ্চা মৃত বলে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি রোগীর স্বজনদের অবহিত করে অপারেশনের পরামর্শ দিলেও তারা রাজি হননি। তাদের ধারণা রিপোর্টটি ভুল ছিল। পরবর্তীতে গতকাল বিকেলে পেটে মৃত বাচ্চা নিয়েই মৃত্যু ঘটে পারভীনের। এ বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, বেলভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় অন্ত:সত্ত্বার মৃত্যুর বিষয়ে তারা কোন ধরনের অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply