আমতলী প্রতিবেদক ॥ ৮০ বছরেও নির্মাণ হয়নি গাজীপুর বন্দরের শহর রক্ষা বাঁধ। জোয়ারের পানিতে ভাসছে এখন গাজীপুর বন্দর। জোয়ার-ভাটার সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয় ওই বন্দরের ব্যবসায়ীসহ বসবাসকারীদের। গত ৮০ বছর ধরেই এ অবস্থা ভোগ করছে বন্দরে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার বাসীন্দারা। জোয়ারের সময় বন্দর এখন প্রায় ২-৩ ফুট তলিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পরেছে। বন্দরটিকে পানির হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানাগেছে, ১৯৪০ সালে আমতলী ও গলাচিপা উপজেলার সীমান্তবর্তী বড় গাবুয়া ও সোনাখালী নদীর মোহনায় গড়ে উঠেছে গাজীপুর বন্দর। তৎকালিন বনিকরা দুই নদীর মোহনাকে ব্যবসার প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন গাজীপুর নামক স্থানকে। ওই ছোট্ট গাজীপুর আজ বৃহৎ বন্দরে পরিনত হয়েছে। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী ৮ হাজার মানুষের বসবাস করছে। দুই উপজেলার অন্তত এক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিন হাট বসে। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম গরুর হাট বসে ওখানে। কিন্তু গত ৮০ বছরেও ওই বন্দরকে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এতে প্রতিদিন জোয়ারে ভাসছে এবং ভাটার শুকাচ্ছে ওই শহরটি। জোয়ার-ভাটার সাথে যুদ্ধ করে বসবাস ও ব্যবসা করতে হয় বন্দরের মানুষের। বড় গাবুয়া ও সোনাখালী দুই নদীর জোয়ারের তোরে পানিতে প্লাবিত হয়ে যায় বন্দরটি। জোয়ারের সময় দোকান পাট বন্ধ করে মালামাল গুছিয়ে রাখতে হয় ব্যবসায়ীদের। আবার ভাটায় মালামাল সাজিয়ে দোকান শুরু করতে হয়। গত ৮০ বছর ধরেই চলছে এমন দুর্বিসহ অবস্থা। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে বন্দরটি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেননি। এতে ওই শহরের মানুষের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে ওই বন্দরটি রক্ষার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, তিন দিকে দু’টি নদী বেষ্টিত বন্দর গাজীপুর। দুই নদীর জোয়ারের পানিতে পুরো বন্দর তলিয়ে গেছে। বন্দরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ী পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে নিরবে বসে আছে। মধ্য জোয়ার থেকে ভাটার আগ পর্যন্ত তাদের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকে। মাসের পনের দিন চলে এমন অবস্থা। তবে শুকনো মৌসুমে এমন সমস্যা হয় না। বর্ষার মৌসুমে তাদের চলে দুর্বিসহ জীবন। চা বিক্রেতা দুলাল হাওলাদার বলেন, দুঃখের কতা আর কি কমু? মোগো দুঃখ কেউ দ্যাহে না। গত ত্রিশ বচ্ছর ধইর্যা দোহান দিই। জোয়ার অইলে দোহান গুছাইয়া বইয়্যা থাকতে অয়। আবার ভাডা অইলে দোহান শুরু হরি। জোয়ারের হাতে গোনে মোগো বন্দরটা রক্ষার দাবী হরি। গাজীপুর বন্দরের ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু গাজীপুর বন্দরের পরিবর্তন হয় না। ৮ হাজার মানুষের বসবাস এবং অন্তত এক হাজার ব্যবসায়ী রয়েছে ওই বন্দরে। বর্ষার মৌসুমে ওই বন্দরের ব্যবসায়ীরা জোয়ার-ভাটার সাথে যুদ্ধ করে বসবাস ও ব্যবসা করছে। গত ৮০ বছর ধরেই বন্দর রক্ষার চিন্তা কেউ করেনি। দ্রুত বন্দর রক্ষার জন্য শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানাই। গাজীপুর বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, গত ৮০ বছর ধরে এই বন্দরটি জোয়ারে ভাসছে এবং ভাটায় শুকাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সাথে লড়াই করেই ব্যবসা ও বসবাস করতে হয়। এই পুরাতন বন্দরটি রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানাই।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, ঐহিত্যবাহী গাজীপুর বন্দরকে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানাই। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, গাজীপুর বন্দরকে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় এনে প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, গাজীপুর বন্দরটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, গাজীপুর বন্দরের হাজার হাজার মানুষ ও ব্যবসায়ীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। দ্রুত এ বন্দরটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানাই।
Leave a Reply