সারওয়ার মো. সাইফুল্লাহ্ খালেদ: ১৯৬৮ সাল। পাকিস্তানের রাজধানী স্থানান্তরিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক দফতর তখনো করাচিতেই রয়ে গেছে। তখন আমি পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স (পিআইডিই) করাচিতে স্টাফ ইকোনমিস্ট হিসেবে কর্মরত। করাচি প্রথম এসে মাস দু’য়েক উত্তর করাচির ফেডারেল এরিয়ার একটি বাসায় সাবলেট ছিলাম। এ বাসাটি ছেড়ে মধ্য করাচির জ্যাকব লাইন্স আসার পরই মূল করাচির সাথে আমার পরিচয় ঘটে। পিআইডিইয়ের জ্যেষ্ঠ সহকর্মী বগুড়ার শামসুল হুদা ভাইয়ের সাথে সাবলেট বাসায় ছিলাম। এখানে আসার পর তার সাথে নানা জায়গায় গেছি। হিল পার্ক, ঝিল পার্ক, করাচি সদর, ক্লিফটন, মানোরা এবং আরো বেশ কিছু দর্শনীয় জায়গা। নিঃসঙ্গবোধ করলেই মানোরা দ্বীপের সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বসতাম। তবে আমাকে মোহাবিষ্ট করেছে কোলাহলমুখর মধ্য বন্দর রোড থেকে পূর্বধারের অদূরে নির্মাণাধীন, নিরিবিলি জিন্নাহর মাজার বরাবর ভেসে আসা গাড়ির শব্দের ঐক্যতান। আমি এখানে বিকেলের দিকে প্রায়ই এসে বসতাম।
এখানে এসে করাচির রাস্তাঘাট চিনতে শুরু করি। একাই শহরে বেরিয়ে যেকোনো জায়গায় যেতে পারি এবং বাসায় ফিরতে পারি। হুদা ভাই এক দিন বললেন- ‘চলুন আপনাকে নাইট ক্লাব দেখিয়ে আনি’। পাকিস্তানের সাবেক রাজধানী করাচিতে তখন পশ্চিমাদের এবং পশ্চিমাভাবাপন্ন দেশীয় লোকদের বিনোদনের জন্য বেশ ক’টি নাইট ক্লাব চালু ছিল। করাচির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে তা দেখেছি। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ‘রোমা শাবানা’তে। টিকিট কাটা হলো জনপ্রতি ২০ টাকা করে। এটি তেমন উন্নতমানের নাইট ক্লাব নয়। খুব একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলেও মনে হলো না, যদিও জানি না অন্যগুলো কেমন। এর আগে আর কোনোটি দেখিনি। আমি সারা জীবনই একজন রক্ষণশীল মানুষ। নাইট ক্লাবে খোলামেলা দেহ প্রদর্শনী আমার ভালো লাগল না। আমার কাছে ব্যাপারটি অরুচিকর মনে হলো। সেখানে কড়া পানীয় থেকে কোমল পানীয় সবই পাওয়া যায়। আমি কোমল পানীয় ‘সেভেন আপ’ পছন্দ করলাম। হুদা ভাই ছাড়াও সাথে ছিলেন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকে কর্মরত, বগুড়ার মোজাম্মেল হক। তারাও তা নিলেন। ফেরার পথে এক বৃদ্ধা বিদেশিনীর সাথে হুদা ভাই আলাপ জুড়ে দিলেন। সেখান থেকে তাকে রীতিমতো জোর করে টেনে উঠিয়ে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বেশিক্ষণ দেখলাম না।
চট্টগ্রামের বাবুর্চিটি ক’দিনের ছুটিতে বাড়ি যাবে। আমাদের যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তার পরিবর্তে একজনকে তার জায়গায় রেখে যাবে। বাড়ির মালিক সিলেটের আখলাকুর রহমান রাজি হলেন আর আমাদেরও কোনো আপত্তি নেই। তবে সে কেমন রান্না করে সেটা আমরা জানতে চাইলাম। জবাবে বলল, সে অনেকদিন থেকে করাচি আছে। এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকের বাসায় করাচিতে সে বাবুর্চির কাজ করেছে। সব রকমের রান্নাই জানে। আমরা যে অঞ্চলেরই রান্না খেতে চাইব তা সে তৈরি করে আমাদের খাওয়াতে পারবে। কাশ্মিরি রান্নাও সে জানে। সে সময়ে চট্টগ্রামের নিম্নবিত্ত বিভিন্ন পেশার লোক করাচিতে কাজ করত। কেউ বাসাবড়িতে বাবুর্চির কাজ করত, কেউ সদরে বিভিন্ন ফলের রস বিক্রি করত, ইত্যাদি।
তাদেরই একজন ছোটখাটো গড়নের এক যুবক। একদিন আমাদের কাশ্মিরি রান্না খাওয়ার শখ হলো। যেই বলা সেই কাজ। সে আজ কাশ্মিরি রান্না খাওয়াবে আমাদের। ছুটির দিন ছিল। রান্নাঘর থেকে লবঙ্গ আর নানা ধরনের কাঁচা মসলার একচেটিয়া ঝাঁজ বেরুতে লাগল। আমরা সবাই শঙ্কিত হলাম, না জানি কি আছে আজ কপালে। খাবার যখন পাতে এলো, ঝাল আর লবঙ্গের তেজ আমাদের খাবার রুচি মাটি করে দিলো। মসলার ঝাঁজে চোখ দিয়ে পানি বেরুতে লাগল। সে সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে প্রস্তাব করল, আরেক দিন অন্য কোনো এক দেশের রান্না খাওয়াবে আমাদের। আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে বললাম- ‘বাবা, দরকার নেই। আমাদের জন্য তুমি বাঙালি রান্নাই করো। ওতেই চলবে’। আমরা দিন গুনতে থাকলাম কবে আমাদের বাবুর্চি ফিরবে।
১৯৬৯ সাল। থাকি উত্তর করাচির আল আজম স্কোয়ারের একটি ফ্ল্যাটে। এক সন্ধ্যায় আমার এক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী, পিএইচডি না করেই প্রেমিকার ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য ফেরত বরিশালের আবুল গফুর ভাই প্রস্তাব করলেন, ‘চলুন যাই, একটা সিনেমা দেখে আসি’। তিনি আল আজম স্কোয়ারেই পৃথক ফ্ল্যাটে থাকেন। আমি রাজি হলাম। যে সিনেমাটি তিনি আমাকে দেখাতে নিয়ে গেলেন, সেটি তিনি এর আগেও বার কয়েক দেখেছেন। বললেন ছবিটির নাম “Don’t Look At/We Are Being Shoot At”. নামটি আকর্ষণীয়। যতদূর মনে পড়ে একটি ইংরেজি রোমান্টিক চলচ্চিত্র। তবে এর আজ কিছুই মনে নেই কিছু মধ্যবয়সী ফ্যাটি নগ্ন লোকের স্টিম বাথের দৃশ্যটি ছাড়া। তবে ‘এহ বাহ্য’, এই চলচ্চিত্রের যে বিষয়টি তাকে বারবার এটা দেখতে অনুপ্রাণিত করেছে, সেটি হলো এই চলচ্চিত্রের হিন্দি টাইটেল মিউজিক। ইংরেজি ছায়াচিত্রের হিন্দি টাইটের মিউজিক! হ্যাঁ তাই। পুরো গানটি আমার আজ মনে পড়ছে না। গানটির মাঝের ক’টি কলি হলো, ‘ওলট তেরা ধ্যান/পলট গিয়া ভাই/আইফেল টাওয়ার/কিধার হায় ভাই’। সুন্দর এই গান চলচ্চিত্রটির শুরুর দিকে প্রায় পাঁচ-ছয় মিনিট দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। এই টাইটেল মিউজিকটি যতক্ষণ চলছিল আমি লক্ষ করেছি, গফুর ভাই তা গুনগুনিয়ে গাইছেন। সত্যি, মন কাড়ার মতো একটি গান। তবে মূল গল্পটি আমার ভালো লাগেনি। মন চাচ্ছিল, বেরিয়ে চলে যাই। চলচ্চিত্রটি গফুর ভাই এনজয় করছেন। তাই এটি শেষ পর্যন্ত দেখতে হলো।
১৯৬৯ সাল। আমি তখন রেডিও পাকিস্তানের ইংরেজি কমেন্ট্রি লেখক ময়মনসিংহের মনজুরুল ইসলামের পাকিস্তান কোয়ার্টারের বাসায় সাবলেট থাকি। তার অনুরোধে এক সন্ধ্যায় রেডিও অফিসে গেলাম একটি রেডিওর বাংলা নাটকের মহড়া দেখতে। নাটকটির বাঙালি পরিচালকের নাম মনে নেই। অল্প ক’জন উৎসুক দর্শক সেখানে জড়ো হয়েছেন। মহড়া কক্ষটি অপরিসর। আমরা কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে যে যেভাবে পারছি মহড়া দেখছি। নাটকের নায়িকার ভূমিকায় ঢাকার অভিনেত্রী রেশমা। নাটকটির পরিচালকের পাশের একটি চেয়ারে বসে আছেন। দর্শকদের দিকে উদাস দৃষ্টি মেলে রেশমা এক সময় হতাশার সুরে উচ্চারণ করলেন- ‘হায়রে দেশের মানুষ’। আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। ভাবলেশহীন একটি কৃত্রিম মুখের দু’টি চোখ সামনের লোকগুলোর ওপর দৃষ্টি মেলে ধরে আছে। যেন পশ্চিমারা অবহেলার দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে, তাদের আর্থিক আনুকূল্যে লালিত পুবের দেশগুলোর দিকে। এই সেসব দেশ যারা নির্বিচারে পশ্চিম থেকে ঋণ নিচ্ছে নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য; বিনিময়ে বিকিয়ে দিচ্ছে নিজেদের ধর্ম এবং সংস্কৃতি- এক কথায় নিজস্ব কৃষ্টি কালচার। পূবের এ দেশগুলোর জন্য মায়া হলো।
১৯৭০ সাল। আমি তখন পাকিস্তান সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস (পিসিএসএস) ট্রেইনি চট্টগ্রামের আবু সালেহর সাথে সেন্ট্রাল করাচির ম্যাকলয়েড রোডের উত্তর পাশে হাসান আলি হলে থাকি। এক দিন সালেহ বলল, ‘আমার এক পরিচিত লোক আছে, সে আমাদের নাইট ক্লাবে নিয়ে যেতে চায়। যাবেন? চলুন যাই’। আমি বললাম- ‘আমি একটাতে বহু আগে গিয়েছিলাম একবার। আমার ভালো লাগেনি’। সালেহ জানায়, আমাদের করাচির সেরা নাইট ক্লাবে নিয়ে যাবে বলেছে। আমি জানতে চাইলাম- ‘কোনটাতে? নাম কী’? সালেহ বলল- ‘নাম জানি না। সে এলে জানা যাবে’। আগেই বলেছি পত্রিকায় অনেক নাইট ক্লাবেরই বিজ্ঞাপন বেরোয়। না গেলেও এমনিতেই বেশ কয়েকটার নাম জানা হয়ে গেছে।
সপ্তাহের শেষ দিন শনিবার সন্ধ্যায় সে লোক এলেন। গাঢ় শ্যামলা মোটাসোটা চেহারার বাঙালি ভদ্রলোক। প্যান্টের নিচে ইন করে সাদা ফুল হাতা শার্ট গায়। মধ্যবয়সী লোকটির পেটটা সামান্য ফোলা। শরীর মজবুত। মুখমণ্ডল গোলাকৃতির। তাকে দেখলে ওই জগতের লোকই মনে হয়। আমি সালেহ আর সালেহর সহকর্মী চট্টগ্রামের হোসেন আহমদ তার সাথে চললাম। রিকশায় উঠার আগে কিছুদূর হাঁটতে হলো। আমি লোকটির মুখের দিকে তাকালাম। মুখে গর্ব ও তৃপ্তির হাসি। জানতে চাইলাম- ‘আমাদের কোথায় নিয়ে যাবেন’? সে বলল- ‘এ্যাক্সেলসিয়ারে’। পত্র-পত্রিকায় এটির বিজ্ঞাপন দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সে বলল? এটিই নাকি করাচির সেরা নাইট ক্লাব। উন্নত মানের কোনো কিছুর তেমন প্রচার লাগে না। এগুলোর নিজস্ব এজেন্ট থাকে মনে হলো। অবাঞ্ছিত লোকদের এড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে এই এজেন্টদের মাধ্যমে এ্যালিট শ্রেণীর খদ্দের জোগাড় করা হয়। এই লোকটি তাদেরই একজন মনে হলো।
আমরা জন প্রতি ৪০ টাকা করে দিলাম। সে টিকিট নিয়ে এলো। আমরা পূর্ব-দক্ষিণের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। উত্তরে-দক্ষিণে লম্বা ক্লাব হল। আমরা ভেতরে প্রবেশ করার আগেই শো শুরু হয়ে গেছে। ক্ষতি নেই। ঘুরে ফিরে একই জিনিস কিছুক্ষণ পর পর দেখানো হয়। যেটা মিস হয়েছে, সেটা আবার দেখা যাবে। হলের উত্তর দিকে দক্ষিণমুখী স্টেজে উজ্জ্বল আলো ঝলমল করছে। স্টেজের উত্তর প্রান্তে উজ্জ্বল আলোর নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বাদ্যযন্ত্রধারীরা একটানা বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছে। পাইপ বাঁশিসহ নানা জাতীয় ঝকমকে পিতলের পাশ্চাত্য জটিল বাদ্যযন্ত্র বাজছে। বিদ্যুৎ বাতির উজ্জ্বল আলো পালিশ করা চকচকে পিতলের বাদ্যযন্ত্রের গায়ে ঝলমল করছে। এসব যন্ত্রধারী কালো প্যান্ট আর উজ্জ্বল সোনালি বোতামওয়ালা গলাবন্ধ সাদা কোট পরেছে। শো-স্টেজের সামনে আলো আঁধারিতে গোল গোল টেবিল সাজানো। একেক টেবিলে চারটি চেয়ার। স্টেজের কাছাকাছি পশ্চিম দিকের একটিতে আমরা চারজন বসলাম। সে সময় শো চলছিল। অতি সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে যুবতীরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা ভঙ্গিতে নিজেদের দেহ প্রদর্শন করছে। তারা বিদেশিনী। টেবিল বয় এসে জানতে চাইলো আমরা কি খাবো। চারজনেই সেভেন আপ নেবো জানালাম। সে তা-ই আমাদের টেবিলে রেখে গেল।
স্ট্র-দিয়ে সেভেন আপ শেষ করতে যেটুকু সময় লাগে এর বেশিক্ষণ সেখানে বসলাম না। বিচরক্তিকর। অশ্লীল। মনে হলো সাধারণ পোশাকের মহিলারাই দেখতে শোভন। ফেরার পথে হাতের ডানে পশ্চিম দিকে দেখলাম, দেশী এক যুবতী আঁটসাঁট প্যান্ট শার্ট পরে এক সুদর্শন দেশীয় যুবকের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সাথের লোকটি আস্তে বলল- ‘এর নাম শাকিলা’। চড়া দামে দেহ প্রদর্শন এবং দেহদান উভয়ই সে করে। দূরে দেখলাম, আলো-আঁধারীতে কিছু যুবতী সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে এক সুদর্শন প্রৌঢ় ভদ্রলোককে ঘিরে বসে আছে। পাকিস্তান প্ল্যানিং কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান এম এম আহমেদ নাকি মাঝে মধ্যে এখানে আসেন। লোকটি জানাল। প্ল্যানিং কমিশন তত দিনে ইসলামাবাদ স্থানান্তরিত হয়েছে।
আমি এক সন্ধ্যায় একবার ওষুধের দোকান ভেবে করাচির সদর এলাকার এক মদের দোকানে ঢুকে পড়েছিলাম। আমার হঠাৎ মনে পড়ল, এই করাচির সন্তান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান এনেছেন। দেশটি ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান’- ইসলাম যাদের ধর্ম। দেশটির মূলমন্ত্র হলো একতা, ঈমান ও শৃঙ্খলা। তারা তা ঠিকই মান্য করে চলছে তো! এ দেশে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হতো বোম্বের সাথে তাল মিলিয়ে। ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতায় এসে এসব নাইট ক্লাব ও মদের দোকানগুলো বন্ধ করে দেন। এ কারণে আজকের পাকিস্তান প্রায় সত্যিকার অর্থেই একটি ইসলামিক রিপাবলিক। আর তাই এটি আজ পশ্চিমাদের না- পছন্দের দেশগুলোর অন্যতম।
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ভাইস প্রিন্সিপাল, কুমিল্লা মহিলা সরকারি কলেজ।
Leave a Reply