বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি ॥ বলাই দাস। বয়স ৩৫ বছর। বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের চন্দ বাড়ির পাশে। বলাইয়ের আপন বলতে রয়েছে একমাত্র বিধবা বড়মা এবং এক শতক জমিতে মাথাগোঁজার ঠাঁই। কেউ কিছু বললে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ৫ টাকা পেলেই সন্তুষ্ট । বলাই জন্মগতভাবেই বাগ প্রতিবন্ধী। কথা স্পষ্ট বলতে পারে না। মাঝে মাঝে অস্পষ্টভাবে কথা বলে। খাবারের জন্য পরিচিতিদের কাছে বিনয়ের সাথে ৫ টাকা দাবী করে। কেউ কেউ আগ্রহ করে টাকা দেয় আবার না দিলে দুঃখে ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে ফেলে। বলাইয়ের ভাষায়,‘ এ দা মোরে ৫ টা ট্যাহা দেন, মুই এহনো খাইে ত পারি নাই, না দেলে মুই খামু কি? বলাই ও তাঁর পূর্ণিমা দাস নামে এক ছোট বোন ছিল। পূর্ণিমাও জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবিন্ধী ছিল। ২০১১ বলাইয়ের বোন পূর্নিমা মারা যায়। বাবা অমূল্য দাস বেতাগী পৌর শহরের সুরেন বর্নিকের দোকানে দিনমজুরের কাজ করতো । অমূল্য ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যায়। ৬ মাসের ব্যবধানে বলাইয়ের মা লক্ষ্মী রানী দাসও মারা যায়। তিনিও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। সৃর্ষ্টিকর্তার স্বাভাবিক নিয়মে বলাইয়ের কাজ থেকে বাবা মা ও তাঁর ছাট বোন চলে যায়। অসহায় হয়ে পড়ে বলাই। বর্তমানে ওর এক বিধবা বড় মা কানন দাস (বলাইয়ের বাবার বড় ভাইয়ের সহর্ধমিনী) এর কাছে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে বলাই মাসে ৭৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা ও কানন দাস ৭৫০ টাকা করে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। আর কিছু মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে অতি কষ্টে মানবেতরভাবে জীবন নির্বাহ করেন।
বলাই পরিচিত দোকানদার কিছু কাজ দিলে খুশি হয়। দোকানদার বা পরিচিতরা চা, পান, বিস্কুট আনতে টাকা দিলে আগ্রহ সহকারে ছুটে যায় এবং নিয়ে আসে। এতে খুশিমনে কাজ করে কারণ কাজ করলে কিছু টাকা পাবে এজন্য করে। মাত্র ৫ টাকায় খুশি। কেউ ৫ টাকার বেশি দিলে নেয়নি। আবার মাঝে মাঝে কোন কাজ না পেলে বা কেউ কোন টাকা দিলে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে এবং কেঁদে ফেলে। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অভিজিৎ গুহ সুমন বলেন,‘ বলাইকে দেখলে কান্না পায়। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত ও মানুষের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে চাল-ডালের ব্যবস্থা করি।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন,‘ সমাজসেবা অফিস থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো যদি সুযোগ সুবিধা থাকে তবে দেওয়া হবে।’
Leave a Reply