মো.অহিদ সাইফুল ॥ ঝালকাঠির রাজাপুরে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রা.লি.নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই বছর আগে ঝালকাঠিতে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ছয় মাসেই গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়েছে এ টাকা। এর পরে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী উমেদার মান্নান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হবার পর স্থানীয় শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীরাও গা ঢাকা দেয়। এর পরে প্রায় এক বছর ঝালকাঠিতে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন এ প্রতিষ্ঠানটির শাখা থেকে মালালাল নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় স্থানীয়রা মালামালসহ ট্রাকটি জব্দ করলেও মালামাল নিতে আসা এক কর্মকর্তা কৌশলে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে ২০১৮ সালের শেষের দিকে এ প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রা.লি.জমির বায়না করেছে এমন সাইনবোর্ড টানিয়ে মাঠ কর্মীর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। এর পরে ছয় মাসেই এ প্রতিষ্ঠান প্রায় একশত গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়েছে চার কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে না পেরে সাধারণ গ্রাহকরা পঞ্চাশ হাজার থেকে দশলাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যাবসায়ী ,পুলিশ বাহিনীর সদস্য, সৌদি প্রবাসীসহ গৃহিনীরা রয়েছেন। ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উমেদার পদে নিয়োগ পাওয়া আ. মান্নান ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে গড়ে তোলেন সাবিল গ্রুপ।তখন থেকেই মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে প্রতারণা করেছেন আ. মান্নান। পরবর্তিতে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের নামেই চলছিল তার আমানত সংগ্রহ। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সাইনবোর্ড এবং কাগজপত্রে লেখা রয়েছে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত। রেজি নং-সি ৮৯১১৪/২০১০।
রাজাপুর ০১নং ওয়ার্ডের সাবেক পুলিশ সদস্য মোবারক আলী হাওলাদার বলেন, অবসর গ্রহনের পর বাহিনী থেকে যে টাকা পেয়েছি তা খরচ করে হাতে দেড়লাখ টাকা ছিল । সেই টাকাটা স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে ব্যাংকের চেয়ে বেশী লাভের আশায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছিলাম। অফিস থাকলেও গত দেড় বছরে এই প্রতিষ্ঠানের কেউকে খুজে পাইনি। গত রাতে অফিসের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদে আমরা কয়েকজন বিনিয়োগকারী উপস্থিত হয়ে মালামাল সহ ট্রাকটি আটক করি।
স্থানীয় সুজন সিকদার বলেন, আমার বাবাও নিউ বসুন্ধরায় তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আমাদের দেখাদেখি আমার ফুপা করেছেন নয়লাখ টাকা বিনিয়োগ। এখন আমরা টাকা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছি। আমার বাবা টাকার চিন্তায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন।
রাজাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নিউ বসুন্ধরায় বিনিযোগ করা কয়েকজন গ্রাহক অফিসের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন খবর পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় মালগুলো লিষ্ট করে রাখা হয়েছে। এব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply