নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শিশু অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার এম এ আজিম এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে বরগুনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় বরগুনা জেলা আইনজীবী সড়কের সামনে বরগুনার সর্বস্তরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের আয়োজনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বরগুনায় শিশু অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার এম এ আজিম ও তার মদদদাতা দানিশ মুজতবার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জালাল উদ্দিন।
বরগুনা এনজিও ফোরামের সভাপতি মোতালেব মৃধার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবশে বক্তব্য রাখেন, সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা ৭১ বরগুনার সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, প্রেসক্লাব সভাপতি সঞ্জীব দাস, পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, পরিবেশ আন্দোলন বরগুনার সভাপতি সুখ রঞ্জন শীল, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য চিত্ত রঞ্জন শীল, সার্বজনীন আখড়া কমিটির সভাপতি সন্তোষ কর্মকার, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মুনিরুজ্জামান মুনির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মাদ ওয়ালিউল্লাহ, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ শিকদার শিবু, পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন কর্মকারসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজিম একজন মফস্বল সাংবাদিক হয়ে যেভাবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন সেটা অনেকেরই দৃষ্টিকটু হয়েছে। তার অর্থের উৎস কি? কিভাবে এতো অঢেল সম্পদের মালিক হলেন সেটা দুদক ও প্রশাসন খোঁজ নিয়ে দেখলে থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসবে। আজিম বরগুনায় আলোড়ন নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন করে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের তার ফাঁদে ফেলে তাদের ব্লাকমেইল করতো। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই আজিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আরো অনেক আজিম সৃষ্টি হবে। তাই শিশু অপহরণ মামলায় গ্রেফতার আজিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মানববন্ধনকারীরা।
এসময় তারা আরো বলেন, তার মহাসড়কে সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা ব্লিডিং এর ভিতরেই তিনি এই সকল কাজ করতো। তার মোবাইল, ল্যাপটপ ও অফিস-বাসায় তল্লাশি চালালে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসবে। তাই প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
প্রসঙ্গত, বরগুনা পৌর শহরের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর নবম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়েকে জোরপূর্বক একটি সাদা প্রাইভেটকারে (গাড়ি নং-ঢাকা মেট্রো-গ ১৭-৮২৩৪) করে শনিবার (৩অক্টোবর) রাতে নিয়ে যায় সাংবাদিক আজিমসহ কতিপয় দুর্বৃত্তরা। এসময় ২ নং সাক্ষি ডাকচিৎকার দিলে প্রাইভেটকারটি দ্রুত গতিতে বরগুনা টাউন হলের দিকে চলে যায়। এঘটনায় অপহরনের অভিযোগে তাৎক্ষনিক ঔ ছাত্রীর কাকা শুক্রবার রাতে বরগুনা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত) এর ৭/৩০ ধারায় তিন জনের নাম উল্লেখ ও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সময় টেলিভিশনের বরগুনার স্টাফ রিপোর্টার মো. আবদুল আজীমকে ১ নম্বর আসামি এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রাফিক্স ডিজাইনার শুভ সেন (২৬) ২নম্বর আসামি এবং একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন টিটুকে (২৭) তিন নম্বর আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর বরগুনা সদর থানা পুলিশ ও পটুয়াখালীর মহিপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাংবাদিক আজিমকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার গোল্ডেন ইন নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় অপহৃত ছাত্রীকেও উদ্ধার করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে আজিমকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এঘটনায় মামলার ২ নম্বর আসামী গ্রাফিক্স ডিজাইনার শুভ সেন ও একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন এখনো পলাতক রয়েছে। অপহরণের ১ সপ্তাহ পরেও পুলিশ ২ আপহরণ কারীকে গ্রেফতার পারেনি।
Leave a Reply