নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন, ২০০০’র খসড়া কাল সোমবার (১২ অক্টোবর) মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠছে। ওই বৈঠকে আইনটি অনুমোদন হতে পারে এমন তথ্য দিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার (১১ অক্টোবর) সেই কর্মকর্তা এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ-। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করার দাবির মধ্যে সরকার এই পদক্ষেপ নিল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হোম আইসোলেশনে আছেন। সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন উইং) ফরিদা পারভীন। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর খসড়া উপস্থাপন করা হবে। সোমবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন, তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন। সচিবালয় থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত থাকবেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘২০০০ সালের নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন সংশোধনের জন্য একটি প্রস্তাব আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে যাচ্ছে। মূলত আইনের ৯(১) ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই ধারায় ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদ- করে প্রস্তাব দেয়া হবে। এই আইনের আরও কয়েকটি স্থানেও ছোট ছোট পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী। ‘নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন, ২০০০’র ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হইবেন।’ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করার দাবি জানিয়েছে। গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে।’
Leave a Reply