আনোয়ার হোসেন ॥ বরিশাল সদর উপজেলা চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচর বাজারস্থর একটি খালকে চলতি বছর সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে ভিটে শ্রেণি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। মূলত ওই খালকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের নামে চান্দিনা ভিটা করে বন্দবস্ত দেওয়ার জন্য খালকে ভিটায় রূপান্তরের নীলনকশা তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে সহকারী কমিশন ভূমি অবৈধভাবে খাল পাড়ে গড়ে ওঠা দোকান উচ্ছেদ করেছে বলে অভিযোগ ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলেন, এসিল্যান্ড অবৈধ ওই খালের পাড়ের দোকানঘর গুলো ভাঙ্গল তার ভিতরে সেই খাল পাড় আবার বৈধ হয় কি করে? আসলে কথায় আছে টাকা দিয়ে বাঘের চৌখ কেনা যায়। ঠিক তাই দেখিয়ে দিলো ভূমি কর্মকর্তা। একধিকে উচ্ছেদ অন্য দিকে প্রভাবশালীদের নামে দখল দিতে খালকে চান্দিনা ভিটায় রুপান্তিত করা। তারা আরোও বলেন, আমরা গরীব ব্যবসায়ী আমাদের নামে কোনও ভিটা নেই। বাজারের জারা ব্যবসা করে না, এমনকি যারা দেশেও নেই এবং সরকারি চাকরিজীবীসহ চেয়ারম্যানের দখলে নামে বেনামি চান্দিনা ভিটা বরাদ্দ। সদর সেটেলমেন্ট অফিসে প্রশাসনের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের চন্দ্রমোহন বাজার ও টুমচর বাজারস্থর চান্দিনা ভিটাগুলো বেশিভাগই প্রভাবশালীদের নামে বন্দবস্ত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ওই জায়গা টাকার বিনিময়ে ইজারা দিতে ভূমি কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে উঠছে। তারা আরো বলেন, ভূমি অফিসের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবশালীদের সঙ্গী হয়ে রাজনৈতিক ও স্থানীয় চেয়ারম্যান শিক্ষকসহ একাধিক ভিটা বরাদ্দ পাওয়ার লোকদের নামে টাকার বিনিময়ে আবার নতুন তালিকা করে তাদের নামে বন্দবস্ত দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এভাবে প্রভাবশালী কালো টাকার মাধ্যেমে অবৈধভাবে ভিটা বরাদ্দ নেওয়ায় অসহায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসা করে চলতে কস্ট তার ভিতরে মাস শেষ হতে না হতেই দোকানঘর ভাড়া হাজির, এমন চিন্তায় ব্যবসা ছেড়েছে অনেকেই। বাজারে পুরানো ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে নতুন কিছু লোকে দোকানঘর ভাড়া নেয় ঠিকিই, কিন্তু কিছু দিন পরে তাদের আর খোঁজে পাওয়া যায়না। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছাড়বার মূল কারন অতিরিক্ত দোকান ভাড়া আদায়।দোকান ভাড়া দিয়ে খালের কোনও পরিবর্তন না করে নিচ থেকে গাছের খুটি দিয়ে দোকান তৈরি করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তবে ভেদুরিয়া ১১২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের খালের মধ্যে দোকানঘর তোলেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
বরিশাল সদর সহকারী কমিশনার ভূমি স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু সেই খালের পাড় চান্দিনা ভিটা রুপান্তর করে একাধিক ভিটা পাওয়ার প্রভাবশালীদের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছোট-বড় ব্যবসা করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাজারে চান্দিনা ভিটা নিজের আত্মীয়ের নামে লিজ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। খালের জায়গাকে ভরাট দেখিয়ে চান্দিনা ভিটা জারি করে ভূমি সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান।
চান্দিনা ভিটায় উল্লেখ করা হয়, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে সদর ভূমি সহকারী কমিশনারের প্রস্তাব অনুযায়ী সরেজমিন তদন্ত করে দেখা যায়, ওই জমি খাল শ্রেণি হতে পরিবর্তিত হয়ে ভিটা শ্রেণিতে রূপান্তর হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই শ্রেণি পরিবর্তনের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। খালটি এখনও বহমান। প্রভাবশালী মহলকে ওই জায়গা বরাদ্দ বা ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আর তাই খালের পাশে থাকা সাধারণ মানুষের দোকানপাট ভেঙে জায়গা খালি করে ওই খালের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার পায়তারা চলছে। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ফোরকান বলেন, আসলে চান্দিনা ভিটা হলো ব্যবসায়ীদের জন্য তাও একটির বেশি নয়। কিন্তু সেই নিয়ম তোয়াক্কা করা হয় না, কারন স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিরদের নামে বরাদ্দ দেয় অফিস কতৃপক্ষ। তিনি আরোও বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের অনুমতি নিয়ে ওই বরাদ্দগুলো দেওয়া হয়। আমরা তদন্ত করি ঠিকিই কিন্তু বরাদ্দ দেওয়ার পরে। আমরা তো স্যারের কথার বাহিরে যেতে পাড়ি না।
স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, খালের পাশে জায়গায় দোকান উঠিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি। সরকার যদি বরাদ্দ দেয় তাহলে আমাদেরই দিতে হবে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করে আসছি, এ জায়াগায় আমাদের দাবিই বেশি। তারা আরও বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ও চেয়ারম্যান এবং শিক্ষকসহ যাঁহারা এলাকায় থাকে না তাদের নামে ওই জায়গা বরাদ্দ দিতে আমাদের দোকান সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা জানান, খাল রক্ষা করে দোকানঘর তৈরির অনুমতি দেওয়া হলে আমাদের নামে ভিটা বরাদ্দ দেওয়া হউক। তাদের ভাড়া দোকানে থেকে ব্যবসা করা হচ্ছে। অথচ প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা খালের জায়গা দখল করে দোকানঘর তৈরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সহকারী কমিশন ভূমি (ম্যাজিস্ট্রেট) মেহেদি হাসান জানান, সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতেই এই অভিযান চালানো হয়। নতুন চারটি দোকান ভাঙা হয়েছে বাকি দোকানগুলোকে ৪ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে খালকে চান্দিনা ভিটায় রুপান্তর করে প্রভাবশালীদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয় কোন উত্তর দেয়নি সহকারী কমিশন ভূমি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কামালউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ীই তাঁতিবাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে অবৈধভাবে খালের জমিকে চান্দিনা ভিটায় রুপান্তর করে এবং এক ব্যাক্তির নামে একাধিক ভিটা বরাদ্দ দেওয়া ও ব্যবসায়ী ছাড়া ভিটা বরাদ্দ পাওয়ায় অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান বলেন, এমন অনিয়ম ভাবে কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এমনকি যাচাই বাছাই করে কে বরাদ্দ পেতে পারে ওই সকল ব্যাক্তিকে নামে দেওয়া হবে। তাছাড়া যেই তালিকা করুক না কেনও আমি তদন্ত করে দেখবো।
Leave a Reply