বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনায় একটি ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রোববার বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত এমাদুল হক বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি গ্রামের সেকান্দার জোমাদ্দারের ছেলে এবং সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বর)। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- একই এলাকার খবির গাজীর ছেলে মোহসিন এবং অহেদ খানের ছেলে মোয়াজ্জেম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে- ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক গৃহবধূ তার কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। মামলায় সাজপ্রাপ্ত এমাদুল হক চার নম্বর সাক্ষী ছিলেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এরপর বাদী ঘুম থেকে ওঠে মেয়ের রুমে গিয়ে মেয়েকে না দেখে খোঁজ করতে গিয়ে মেয়ের জুতা ও ওড়না খুঁজে পান। এরপর খোঁজা-খুঁজি করে তিনি সুপারি বাগান থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ এ মামলার সাক্ষী এমাদুল হককে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। মামলার এজাহারে চার নম্বর সাক্ষী ছিলেন এমাদুল হক। কিন্তু এ তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় তদন্তের আবেদন করলে এমাদুলকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয় মহসিন ও মোয়াজ্জেমকে।
আদালতের ওই সূত্রটি আরও জানায়- মূলত ওই গৃহবধূর মেয়েকে ধর্ষণ করেন মামলার চার নম্বর সাক্ষী এমাদুল। এরপর পূর্বশত্রুতার জেরে তিনি এ ধর্ষণের অভিযোগ চাপিয়ে দেন তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে। নির্দোষ দুই অভিযুক্তকে ফাঁসাতে তিনি সহায়তা করেন গৃহবধূকে। পরে মামলার বাদী আদালতে অভিযোগ করেন- এ মামলার সাক্ষী এমাদুল তার কন্যাকে ধর্ষণ করেন। এরপর এ ধর্ষণের অভিযোগ তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে তুলে দিতে নানাভাবে ভয় দেখান। তাই তিনি নিরুপায় হয়ে মহসিন ও মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। ঘটনা জানাজানির পর এ মামলায় সাক্ষী এমাদুল আটমাস কারাভোগ করেন। পরে আদালত বাদী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পযার্লোচনা করে এমাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন- এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। এখন পর্যন্ত রায়ের কপি আমরা পাইনি। রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকার কারণে একটি স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিজে ধর্ষণ করে অন্যদের বিরুদ্ধে বাদীকে বাধ্য করে মিথ্যা মামলা করান। এই জঘন্যতম ঘটনায় এমাদুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন আদালত।’
Leave a Reply