নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রতারনার মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এর চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে বরিশালের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। আদালতের বিচারক প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত মোস্তাইন বিল্লাহ রবিবার এই আদেশ দেন। একই দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকা যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক) এর বরিশালের ৬ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে নেয়া ৬০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের জন্য বরিশালের ৬০ জন শেয়ারহোল্ডার পাওয়ার গ্রহীতা আদালতে মামলা দায়ের করেন যার নম্বর ০৫/২০২০। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সকল আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মামলার আসামীরা হচ্ছেন, যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল স্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’র চেয়ারম্যান হোসাইন আল মাসুম, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মনির উদ্দিন, পরিচালক সৈয়দ রাশেদুল হুদা চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ লোকমান হোসেন।
বরিশালের যুবকের পাওনাদার ৬ হাজার গ্রাহকের পক্ষে মোঃ আনিছুর রহমান, আব্দুল কাদের তালুকদার, মোঃ শামসুজ্জামান টুটুল, মাহমুদা বেগম, জাহেদুল আলম তুহিন, ও সালমা পারভীনসহ ৬০ জন শেয়ারহোল্ডার বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক) ১৯৯৬ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৮৬০ সালের সোসাইটি আইনে স্বেচ্ছাসেবী মুলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু করে। বিশেষ করে ২০০১ সালের শুরু থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারা বরিশালে সাধারণ সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে যুবক হাউজিং সহ একাধিক প্রকল্পে অনেক আকর্ষণীয় ও লোভনীয় লাভ দেখিয়ে বিভিন্নভাবে প্রায় শত কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। ২০০৬ সালের পরে যুবকের কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সাধারণ গ্রাহকরা যুবকের নিকট তাদের পাওনা টাকা দাবি করলে পাওনা পরিশোধ না করে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে জমি জমা দেওয়ার জন্য লোভ দেখিয়ে আরো অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একপর্যায়ে যুবক হাউজিংয়ের গ্রাহকরা কোন উপায় না পেয়ে যুবকের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করেছিল। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে যুবকের পরিচালকগণ বেরিয়ে যায়। গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে কিছুই করতে পারেনি।
পাওনা টাকা আদায়ে অনেক চেষ্টার পরে ২০১৪ সালের শুরুতে যুবকের বরিশালের গ্রাহকরা যুবক হাউজিংয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে বরিশাল এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় টাকা উদ্ধারের জন্য বৈঠক করে। যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের নগদ টাকা দেওয়ার মতো কোন সামর্থ্য তাদের নেই বলে ছাপ ঘোষণা দেন। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় পাওনাদার গন কোন উপায় না পেয়ে বরিশালের হেমায়েত উদ্দিন রোডে যুবকের ক্রয় কৃত ভেনাস শপিং সেন্টার এর ১৮.৫ সাড়ে শতক জমি ও তার উপর দ্বিতল ভবন সহ সকল স্থাপনা বরিশালের ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের পাওনার বিপরীতে দেওয়ার জন্য যুবক কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করলে অনেক দরকষাকষির পরে অসহায় নিরীহ পাওনাদাররা বরিশালের ৬০০০ ক্ষতিগ্রস্থ পাওনাদারদের ৬০ কোটি টাকার ডীড-ডকুমেন্টের বিনিময় ভেনাস মার্কেটটি যুবকের কাছ থেকে বুঝে নিতে রাজি হন। যদিও ভেনাস মার্কেটটি ২০০৫ সালে যুবক হাউজিং মাত্র চার কোটি টাকারও কম টাকায় ক্রয় করে। সেই মার্কেট ২০১৪ সালে অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ পাওনাদারদের কাছে ৬০ কোটি টাকা দাম ধরে ৬০ কোটি টাকার পাওনার ডিড ডকুমেন্টের বিপরীতে হস্তাসন্তরের জন্য প্রস্তাব দেন। ওই সময়ে ভেনাস মার্কেটের বাজার দর ছিল সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০কোটি টাকা । তারপরও নিরুপায় হয়ে যুবকের ৬০০০ গ্রাহকদের পক্ষে বরিশালের পাওনাদার প্রতিনিধি ৬০ জন যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক) এর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের প্রস্তাবে রাজি হন। এ প্রেক্ষিতে যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এর পক্ষে চেয়ারম্যান হোসাইন আল মাসুম ২০১৪ সালের ৩০ জুন ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি সমঝোতা চুক্তি পত্র স্বাক্ষর করেন।
সেই মোতাবেক বরিশালের পাওনাদারদের ৬০ কোটি টাকার ডীড-ডকুমেন্ট যুবক হাউজিং এর নিকট প্রদান করা হয়। তারা প্রায় তিন মাস ধরে অনেক যাচাই-বাছাই করে যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হোসাইন আল মাসুম শেয়ারহোল্ডার প্রতিনিধিদেরকে ৬০ কোটি টাকার প্রাপ্তি স্বীকার পত্র প্রদান করেন এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল /পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সম্পাদন করে দেন।
পরবর্তিতে যুবক হাউজিংয়ের চেয়ারম্যানসহ কতৃপক্ষ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট মার্কেটটি হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে মিরপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এর যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মুখে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে পাওনাদার প্রতিনিধি ৬০ জনের নামে একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন করে দেন। যা বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করার জন্য দাখিল করিলে সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করতে অসম্মতি জায়। কারণ হিসেবে তিনি ভেনাস মার্কেট এর বিপরীতে বরিশাল জজকোটে দুইটি টাকার মামলা রয়েছে বলে বলেদেন। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেনাস মার্কেটের বেচাবিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না এবং এই মামলায় আদালতের বেচাবিক্রির উপরে একটি নিষেধাজ্ঞা আছে তারপরেও যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে প্রতারণার মাধ্যমে যুবকের গ্রাহকদের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকার ডকুমেন্ট গ্রহন করে। এমনকি তারা পাওয়ার দলিল বা কোন প্রকার হস্তান্তর দলিল যাতে রেজিস্ট্রি অফিস রেজিস্ট্রি না করে সেজন্য আবেদন করেছেন। একথা জানার পরে যুবকের পাওয়ার গ্রহীতারা এই মামলা দায়ের করেন। ###
Leave a Reply