নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ দক্ষিণাঞ্চলে নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে করোনা সংক্রমন গত মাসের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুনের কাছে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমছে সুস্থতার সংখ্যা। গত দিন পনের ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে সংক্রমন পরিস্থিতির ক্রমবনতি অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পারিস্থিতি এখনো বরিশাল মহানগরীতে। অথচ এ নগরীতে বিভাগের মাত্র ৬% মানুষের বাস। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৮ জন। সেখানে চলতি মাসের একই সময়ে তা ৩১০ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের অন্তত ৫৫Ñ৬০ ভাগই বরিশাল মহানগরীতে। গত ১০ দিনে এ মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবেই প্রায় ১৭০। এখনো সংক্রমন হার ১৭.০৪%। অপরদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেবে গত মাসের প্রথম ১০দিনে যেখানে ২৫০ জন কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেখানে চলতি মাসের একই সময়ে তা ১৯৯ জনে হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে। এ পর্য়ন্ত দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট আক্রান্ত ৯ হাজার ২৩৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ হাজার ৫৪৪ জন। সুস্থ্যতার হার এখন ৯২.৬৫%-এর মত। যা ইতোপূর্বে ছিল ৯৩.৫৪%। মঙ্গলবার সকালের পূর্ববির্ত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৩১ জনের নমুন পরিক্ষা হলেও ৩৫ জনেরই করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। আর ভোলাতে এসময়ে ২০ জনের নমুনা পরিক্ষায় কারো দেহে পজিটিভ সনাক্ত হয়নি।
তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে নুন্যতম কোন স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন না করার কারনেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সহ অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া এবং অবিলম্বে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। তবে এখন বরিশাল মহানগরী সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায়ই দিনরাত মানুষ আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিশোর গ্যাং আবার পুরনো চরিত্রে ফিরেছে। বরিশাল মহানগরীর রাস্তার ধারে পথ খাবারের দোকানগুলোতে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনার সাথে আড্ডাবাজিও চলছে অবাধে। এদিকে গত ১৮ মার্চ দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম সনাক্তের পর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারী হিসেবে মোট করোনা আক্রান্ত ৯ হাজার ২৩৩ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১৭৯ জন। মৃত্যুহার এখনো প্রায় ১.৯৫%। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ৪ হাজার ৩৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মহানগরীতেই সংখ্যাটা ৩ হাজারের বেশী। আর জেলায় মৃত্যুর সংখ্যাটা ৭৩ হলেও মহানগরীতেই মারা গেছেন প্রায় ৪০ জন।
পটুয়াখালীতে এপর্যন্ত আক্রান্ত ১,৫৫৪ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৩৮ জন। দ্বীপজেলা ভোলাতে আক্রান্ত ৮২৪ জনের মধ্যে ৮ জন, পিরোজপুরে ১,১১৭ জনের মধ্যে ২৪ জন, বরগুনাতে ৯৫২ জনের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৪ উপজেলার নিয়ে গঠিত ছোট জেলা ঝালকাঠীতে এ পর্যন্ত ৭৪৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সকালের পূবর্বতি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে যে আরো ৩২ জন কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছে, তার ২৭ জনই বরিশাল জেলায়। এরমধ্যে মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩। এছাড়া পিরোজপুরে ৩জন ও ঝালকাঠীতেও নতুন করে আরো দুজন করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনাতে নতুন কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। এদিকে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মঙ্গলবার ২৪ জন, আইসোলেশনে ২৬ জন ও আইসিইউ’তে ৯ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
Leave a Reply